OrdinaryITPostAd

অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকির কারণ

বর্তমান সময়ে অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ব্যস্ততম জীবনযাত্রা ও সহজলভ্য খাবারের মানের কারণে আমাদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণে অনেকাঙ্কশে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্য ও অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারণে একপর্যায়ে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। ফলে একটি পর্যায়ে বিপজ্জনক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়, যার মধ্যে ফ্যাটি লিভার অন্যতম। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ একটা বিষয় আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে, সেটি হল খারাপ জীবনযাপন আর খাদ্যাভ্যাস যে কোন জটিল রোগকে শরীরে বাসা করতে সুযোগ করে দেয়। আমরা ব্যস্তময় জীবনে সময়ের অভাবে প্রায়শই ঘরে তৈরি করা খাবার না খেয়ে বাইরের খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। যে কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দিন দিন খুব জটিল আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ভুল খাদ্যাভ্যাস আর কায়িক পরিশ্রমের অভাবে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি যদি এই রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চান অর্থাৎ পরিত্রাণ পেতে চান, তাহলে অবশয়্যই সঠিক জীবনযাত্রা, কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করে এবং সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাবাসের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

ফ্যাটি লিভার কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ফ্যাটি লিভার একধরনের হেপাটিক স্টেটোসিস অর্থাৎ লিভার ডিজিজজনিত রোগ যা বিশ্বব্যাপী একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খাদ্য গ্রহণের ফলে এই রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফ্যাটি লিভার এমন একটি অবস্থা যেখানে যকৃতের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে থাকে। যার কারণে শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যঘাত সৃষ্টি করে। গুরুতর পর্যায়ে গেলে নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (NASH) এবং লিভার সিরোসিসের দিকে যেতে পারে। বেশি ক্যালোরি গ্রহণের কারণে লিভারে চর্বি জমতে শুরু করে। যখন লিভার স্বাভাবিক উপায়ে চর্বি প্রক্রিয়া করতে অক্ষম হয়, তখন খুব বেশি চর্বি জমে যায়। স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মতো কিছু পরিস্থিতিতে ভুগছেন এমন ব্যক্তির ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ফ্যাটি লিভারের প্রকারভেদ

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ও অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজসহ দুটি প্রধান ধরনের ফ্যাটি লিভার রোগ রয়েছে। লিম্নে ফ্যাটি লিভারের কিছু প্রকারভেদ তুলে ধরা হলঃ

  • অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার

অতিরিক্ত মদপানের কারণে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়। আপনার লিভার আপনি যে অ্যালকোহল পান করেন, তার বেশিরভাগের অণুগুলোকে ভেঙে দেয় এবং এ প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যত বেশি অ্যালকোহল পান করবেন, লিভার তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগ হলো অন্যান্য অ্যালকোহল-সম্পর্কিত লিভারের রোগের প্রথম ধাপ। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি অ্যালকোহলযুক্ত হেপাটাইটিস— এমনকি লিভার সিরোসিস হতে পারে, যা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক রোগ।

  • নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ অ্যালকোহলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। একজন ব্যক্তির নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ হয়, যখন লিভারের ওজনের ৫ শতাংশ বা তার বেশি শুধু চর্বি দ্বারা গঠিত হয়। যদিও চিকিৎসকরা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের সঠিক কারণ জানেন না, তারা বলে যে এটি স্থূল ও ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ।

অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি

অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ, যেমন-

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: বেশি চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার, যা শরীরের চর্বি জমার হার বৃদ্ধি করে।
  • উচ্চ-ক্যালোরি খাদ্য: অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ফ্যাট জমতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং কম পুষ্টিকর খাবার, NAFLD এর অন্যতম কারণ।
  • সময়মত না খাওয়া: একবারে অনেক খাবার গ্রহণ এবং দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকা, যা যকৃতের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায় যে কারণগুলো, যেমন-

  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল সেবন যকৃতের কোষে চর্বি জমার প্রধান কারণ। 
  • স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন ফ্যাটি লিভার রোগের অন্যতম কারণ। 
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: সক্রিয় জীবনযাপনের অভাবে চর্বি দ্রুত জমে।

সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

সচেতনতাঃ

ফ্যাটি লিভার প্রাথমিক অবস্থায় তেমন লক্ষণহীন হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি সিরোসিস বা লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাসের মতো মারাত্মক রোগে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই প্রয়োজনে সঠিক সময়ে চেকাপ করার মাধ্যমে আমাদের সচেতন থাকাটা একান্ত জরুরি। 

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ

ফ্যাটি লিভার ঝুঁকি থেকে প্রতিরোধের কিছু উপায় নিম্নোক্তভাবে তুলে ধরা হল, যেমন-

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ: তাজা ফল, শাকসবজি এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ। 
  • শারীরিক পরিশ্রম: নিয়মিত ব্যায়াম এবং সক্রিয় জীবনযাপন। 
  • অ্যালকোহল পরিহার: যকৃতকে সুস্থ রাখার জন্য অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা।

চিকিৎসা পদ্ধতি

প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার উন্নতি। উন্নত পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

উপসংহার

ফ্যাটি লিভার একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, তবে সচেতনতার অভাবে এটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। অনিয়মতান্ত্রিক খাবারের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণ, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেলাম। আজকের আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতে এমন আরও স্বাস্থ্য ভিত্তিক আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হওয়ার প্রত্যাশা রেখে আজকের মতো বিদায় নিলাম। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪