OrdinaryITPostAd

বিশ্ব নারী দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কি

আজ ৮ই মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। এই দিনটি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের অধিকার ও অর্জনের উদযাপনের জন্য একটি বিশেষ দিন। সমাজে নারীদের ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। আপনার জীবনে এমন কোনো নারী আছেন যাঁরা আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছেন? যদি থাকেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি দারুণ সুযোগ হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিশ্ব নারী দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। 
পোস্টসূচিপত্রঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (পূর্বতন নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছরের মার্চের ৮ তারিখে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। সারা বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়। বিশ্বের ভিভিন্ন প্রান্তে নারীদিবস উদ্‌যাপনের লক্ষ্য বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। কোথাও নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা উদ্‌যাপনের মুল বিষয় হয়, আবার কোথাও কোথাও নারিদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ও রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম নারী সম্মেলন করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ এ দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সমতা, ক্ষমতায়ন, অধিকার/ কন্যা, নারী, সবার’। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সম–অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদ্‌যাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।

ইতিহাস

এই দিবসটি উদ্‌যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধরা।বাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

আধুনিক সংস্কৃতিতে নারীদের ছুটি

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে_আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটির দিনভোগ করেন।

বিশ্ব নারী দিবস: সমতা ও সাফল্যের এক আলোকবর্তিকা

প্রতি বছর ৮ই মার্চ বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিশেষভাবে উদযাপিত হয় “বিশ্ব নারী দিবস।” এটি শুধুমাত্র একটি দিন নয়, বরং নারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানো, তাঁদের অর্জন উদযাপন এবং লিঙ্গ সমতা অর্জনের প্রেরণা জোগানোর একটি মাইলফলক। এই দিনটি সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অবদান এবং চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়।

নারী দিবসের ইতিহাস

বিশ্ব নারী দিবসের ইতিহাস শুরু হয় ১৯০৮ সালে, যখন নিউইয়র্ক শহরের প্রায় ১৫,০০০ নারী কর্মী সমান বেতন, কর্মঘণ্টার সংক্ষিপ্তকরণ এবং ভোটাধিকারের দাবিতে মিছিল করেছিলেন। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে ক্লারা জেটকিন প্রথমবার নারী দিবস উদযাপনের প্রস্তাব রাখেন। এর পরের বছর ১৯১১ সালে ইউরোপের চারটি দেশ—ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ায় প্রথমবার নারী দিবস উদযাপিত হয়।

১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ “আন্তর্জাতিক নারী দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা আরও বৃহৎ পরিসরে উদযাপনের একটি ভিত্তি গড়ে তোলে। আজ, এটি বৈশ্বিকভাবে সমাজে লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

নারীদের অবদান এবং সংগ্রাম

নারীরা যুগে যুগে পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাদার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিল্পকলার মতো ক্ষেত্রগুলোতে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।

উদাহরণস্বরূপ, মেরি কুরি, যিনি প্রথম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, বিজ্ঞান জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। একইভাবে, মালালা ইউসুফজাই নারীদের শিক্ষা অধিকারের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করেছেন এবং পৃথিবীজুড়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবু এখনো অনেক নারী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন—বেতন বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি এবং নেতিবাচক সামাজিক প্রতিক্রিয়া তাঁদের অগ্রযাত্রার পথে বাধা সৃষ্টি করে।

লিঙ্গ সমতা: বর্তমান চিত্র

আজও বিশ্বজুড়ে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পান এবং অনেক দেশে এখনও নারী শিক্ষা বা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হন। “Gender Pay Gap” এবং “Glass Ceiling” প্রথার মতো সমস্যাগুলি এখনও বিদ্যমান।

লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর উদ্যোগ। সমাজে নারীদের প্রাপ্য সম্মান এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা একটি আরও উন্নত ও ন্যায্য সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

আরও পড়ুনঃ নোরিক্স খেলে কি মাসিক হয়

নারী দিবস উদযাপন: কীভাবে সমাজের অংশ নেওয়া উচিত

নারী দিবস উদযাপন কেবল ফুল বা উপহার প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি মঞ্চ যেখানে আমরা প্রকৃত পরিবর্তনের কথা বলতে পারি। উদাহরণস্বরূপ:

  1. সচেতনতা কর্মসূচি: নারীদের অধিকার, স্বাস্থ্য, এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সেমিনার বা কর্মশালা আয়োজন করা।

  2. কর্মক্ষেত্রের নীতিমালা: নারীদের জন্য সুরক্ষিত এবং সমান সুযোগদায়ক কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা।

  3. মহান নারীদের সম্মাননা: এমন নারীদের উদযাপন করা, যাঁরা তাঁদের ক্ষেত্রে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

  4. শিক্ষায় বিনিয়োগ: নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বৃত্তি প্রদান বা দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনা।

উপসংহার

বিশ্ব নারী দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একসঙ্গে কাজ করলে আরও ন্যায্য, সমতা-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এটি কেবল নারীদের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির জন্য একটি যৌথ অঙ্গীকার। যে যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার চারপাশের নারীদের সম্মান জানাতে এবং তাঁদের প্রতি সমর্থন দেখাতে একবার হলেও ভাবুন—কেননা সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতেই মানবিক উন্নয়ন সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪