শীতকালীন বাহারি ফুলের সুভাস
ফুলকে পছন্ধ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। ফুল সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক। আবার ফুলকে নিসর্গের অলঙ্কার সাদৃশ্য মনে করা হয়। ফুলের গ্রান আমাদের মনকে করে স্বচ্ছ, সজীব, নির্মল ও পবিত্র। ফুলের অনাবিল সৌন্দর্য আমাদের ব্যতীত মনকে করে পুলকিত। তাইতো, ফুলের প্রতি মানুষের অনুরাগও রয়েছে জন্ম থেকে জন্মান্তর। শীতকাল মুলত ফুল ফোটার মোক্ষম সময়। শীতকালের আগমন ঘটলে প্রকৃতি নিজেকে তৎক্ষণাৎ গুটিয়ে নিতে থাকে এবং একই সাথে বাহারি ফুলের সমারহে নিজেকে সজীব করে তুলে। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে অরণ্য। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে শীতকালীন বাহারি ফুলের সুভাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবো।
পোস্টসুচিপত্রঃ আমাদের দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও ঋতুবিবর্জিত দেশ হিসেবে বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। এই দেশের গ্রাম-বাংলার মেঠো পথের দৃশ্যপট আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়। গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে আমরা হরেক রঙের ফুল দেখতে পাই। এমন হরেক রকমের ফুলের সমারহে আমাদের বিষাদময় মন হয়ে উঠে প্রফুল্ল্য। বাংলাদেশ মৌসুমী বায়ুর দেশ বিধায় এখানে অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে ফুল ফুটতে বেশি দেখা যায়। শীতকাল মূলত ফুল চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। শীত আসলেই প্রকৃতি হয়ে উঠে রুক্ষ। চতুর্দিকে তীব্র কুয়াশার কারণে প্রকৃতির মধ্যে এক প্রকার শীতলতা বিরাজ করতে থাকে। প্রকৃতি হারায় তার সুব্রতা। শীতের প্রখরতায় এক পর্যায়ে পাতা ঝড়ে গাছ হয় ন্যাড়া। কিন্তু, শীতকালীন মৌসুমে নার্সারি অথবা বাগান বা টবে ফুল চাষের প্রচলন খুবই দেখতে পাওয়া যায়। যারা ফুল প্রেমি বা ফুলের বাগান করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য শীতকালই উপযুক্ত সময়। আমাদের মধ্যে যারা শহরমুখী অর্থাৎ শহরের বাসাবাড়ি বা ফ্ল্যাটবাড়িতে বসবাস করি তাদের ক্ষেত্রে বাগানের চাইতে টবে ফুল চাষ সহজ পন্থা। এই শীতে আপনার বিল্ডিং-এর ছাঁদে কিংবা বাড়ির বারান্দায় অনায়াসেই বাহারী ফুল গাছ লাগিয়ে ফুলের গ্রান নিতে পারেন। তাই, বাড়ীর বারান্দায় অথবা ছাদে বা বাড়ীর আঙ্গিনার ছোট জায়গায় কিভাবে সহজেই ফুল চাষ করে শীতকালীন বাহারি ফুলের সুভাস নেওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা নিন।
শীতকালীন ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ফুলের নাম-
গাঁদা
ছোট-বড় সকলের কাছেই গাঁদা ফুল খুবই পছন্দনীয় একটি ফুলের নাম। গাঁদা শীতকালীন ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। গাঁদার বৈজ্ঞানিক নাম হল Tegetes erecta। গাঁদা ফুল উজ্জ্বল হলুদ ও কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। গাঁদা ফুল মূলত আমেরিকান জাত। পৃথিবীতে আনুমানিক প্রায় ছাপান্ন প্রজাতির গাঁদা ফুল পাওয়া যায়। তবে, হলুদ গাঁদা আফ্রিকান জাত। আবার কালচে ও লাল রঙের উপর ফোঁটা ফোঁটা দাগ বিশিষ্ট গাঁদা যাকে আমরা রক্তগাঁদা বলে চিনে থাকি, এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকান প্রজাতির ফুল। কিন্তু আফ্রিকান প্রজাতির গাঁদাও অনেক সময় বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মূলত পাঁচ ধরণের গাঁদা পাওয়া যেমন-রাজগাঁদা, কালীগাঁদা, ছোটগাঁদা, তারাগাঁদা, মিনুটা গাঁদা ইত্যাদি। গাঁদা ফুলের গাঁয়ের আবরণ নির্বিশেষে হলুদের নানা শেডে, কমলা ও লাল বর্ণের হয়ে থাকে।
ফুটন্ত গাঁদাফুল মানেই হলুদের সমারহ। শীত আসলেই এটির ব্যাপক চাষ হতে দেখা যায়। গাঁদা ফুলের ব্যবহার এখন সকল সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। বিবাহের সাজ-সজ্জায়, জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও গৃহসজ্জা থেকে শুরু করে অনেক সামাজিক অনুস্থানেই এখন গাঁদা ফুলের ব্যাপক ব্যবহার বিস্তার লাভ করেছে।
গোলাপ
ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক হচ্ছে গোলাপ। আমরা গোলাপকে সাধারণত ফুলের রাণী হিসেবে চিনে থাকি। গোলাপের সুভাস আমাদের অতৃপ্ত মনকে সুরুভিত করে। তাইতো এর সুভাস পুলকিত করে আমাদের মনকে সার্বক্ষণিক। সকলের কাছে গোলাপ ফল খুবই পছন্দের একটি ফুল। জানা যায়, পৃথিবীতে গোলাপ আনুমানিক ১৫০ প্রজাতির রয়েছে। জাত ও বর্ণ ভিন্ন হওয়ায় নির্বিশেষে এর গায়ের রংয়েরও ভিন্নতা রয়েছে। বর্ণের মধ্যে যেমন-লাল, গোলাপী, সাদা, কালো ও হলুদ ইত্যাদি প্রকৃতির হয়ে থাকে।
গোলাপ শীতকালীন প্রধান ফুল হলেও মোটামুটি বছরের প্রায় সব মৌসুমেই এর চাষ হতে দেখা যায়। তবে, গোলাপ চাষের ক্ষেত্রে উষ্ণ প্রকৃতির আবহাওয়া যেমন-২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেঃ এর মধ্যে থাকাটা খুবই উপযোগী। আবার মাত্রাতিরিক্ত উষ্ণ ও আদ্রতায় পরিপূর্ণ আবহাওয়াতে গোলাপ গাছ তেমন একটা ভালো হয়না বললেই চলে। আর গোলাপ গাছের জন্য প্রয়োজন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পরিমিত রোদ।
গোলাপ গাছ চাষের ক্ষেত্রে আপনার পছন্ধক্রম হিসেবে সর্বপ্রথম চারা গাছকেই প্রাধান্য দেয়াটা উত্তম। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা গোলাপ গাছ চাষের ক্ষেত্রে ভাল ও উন্নতমানের গোলাপ গাছের ডাল, বীজ ও কলম সংগ্রহ করে থাকি৷ গোলাপ গাছের শ্রীবৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আলো ও বাতাস প্রবেশ করে এমন খোলা জায়গাকে নির্বাচিত করা উচিৎ। এক্ষেত্রে, পানি জমেনা এমন ঝরঝরা দোআঁশ প্রকৃতির মাটিই গোলাপ চাষের জন্য বেশী ভালো। আমাদের মধ্যে যারা টবে চারা রোপণ করে গোলাপের চাষে অব্যস্থ, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই গোলাপের চারার আয়তন ভেদে ছোটো জাতের জন্য ৮'' ও বড় জাতের জন্য ১২'' টবে লাগানোই স্রেয়।
ডালিয়া
শীতকালীন বাহারি ফুলের মধ্যে আরও একটি অন্যতম আকর্ষণীয় ফুল হচ্ছে ডালিয়া ফুল। এটি মূলত মেক্সিকান জাত। শীতকালীন অন্যান্য ফুলগুলোর মধ্যে ডালিয়া ফুল সুন্দর হওয়ায় অনেকের মধ্যে বেশ পরিচিত। সাধারণত ডালিয়া ফুলের অনেকগুলো পাপড়ি থাকে। পাপড়িগুলি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। প্রজাতির দিক থেকে ডালিয়া ফুল বিভিন্ন রঙের যেমন-সাদা, হলুদ, কমলা, বেগুনি ও গোলাপী আকৃতির হয়। ডালিয়া ফুল আকৃতিতে বড় হলেও অনেক সময় ছোট আকৃতির ডালিয়াও বাজারে দেখতে পাওয়া যায়।
ডালিয়া ফুল প্রধানত কন্দযুক্ত ও গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। পৃথিবীতে আনুমানিক ৪২ প্রজাতির ডালিয়া ফুল পাওয়া যায়। ডালিয়া ফুল মূলত বীজ, ডাল কলম, জোড় কলম ও মূল কন্দ'র দ্বারা বংশবিস্তার করে থাকে। শরৎ-এর শেষে ডালিয়ার বীজ রোপণ কিংবা কলম তৈরী করতে হয়। এই ফুল চাষের ক্ষেত্রেও সূর্যের আলো অত্যাবশ্যকীয়। মনে রাখবেন, ডালিয়া ফুল গাছে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর অভাবে অনেকসময় দেখা যায় গাছে ফুল তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং ফুল হলেও আকৃতি হয় ছোট।
আরও পড়ুনঃ নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা
জিনিয়া
শীতকালীন আরও একটি ফুল হচ্ছে জিনিয়া। যার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ZINIA ELEGANS। জিনিয়ার আদিনিবাসও ডালিয়া ফুলের ন্যায় মেক্সিকোতে। তবে, সারা পৃথিবীতেই এখন অন্যত্র এই ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এই ফুলের মন মুগ্ধকর সুবাস প্রাণকে জুড়িয়ে যায়। জিনিয়া ফুল বছরজুড়ে চাষ হলেও এটি মূলত শীতকালীন ফুল হিসেবে সু-পরিচিত। মাটিতে বীজ রোপণের মাধ্যমে এই ফুলের চাষ করতে হয়। জুন-অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় জিনিয়া ফুল চাষের মুখ্যম সময়। স্যাঁতস্যাঁতে মাটি ব্যতীত উর্বর দোআঁশ মাটি এবং সূর্যের আলো জিনিয়া ফুল চাষের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী। জিনিয়া গাছের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। রঙের দিক থেকে জিনিয়া ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, যেমন-সাদা, লাল, বাদামী, বেগুনি, হলুদ, কমলা রঙের। বিশ্বে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ২০ প্রজাতির জিনিয়ার জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। জিনিয়া ফুল ফুটলে কখনো এককভাবে আবার কখনোবা জোড়া আকৃতির ফুটে থাকে।
কসমস
শীতকালীন ফুলের মধ্যে কসমস ফুলের জাতটিও অন্যতম। কসমসও মেক্সিকো থেকে আসা ফুল। কসমস একটি গ্রীক শব্দ। কসমস-এর বাংলা আভিধানিক অর্থ হোল ঐকতান। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল COSMOS BIPINNATUS। মূলত এটিকে কসমস বা মেক্সিকান এষ্টার বলে ডাকা হয়। তবে, এই ফুলের বেশ অনেকগুলি ইংরেজি নাম খুঁজে পাওয়া যায়, যেমন-GARDEN COSMOS, MEXICAN COSMOS, MEXICAN ASTER ইত্যাদি। এটি একপ্রকার মাঝারি আকারের HERBACEOUS উদ্ভিদ। বিচিত্র ও নানান রঙের দিক থেকে কসমস ফুল ফুটে থাকে, যেমন-উজ্জ্বল কমলা-হলুদ, সাদা, গোলাপি, চকলেট ইত্যাদি রঙের ।
মূলত বীজ রোপণের মধ্য দিয়ে কসমসের বংশবিস্তার ঘটে থাকে। বছরের শেষভাগে অর্থাৎ অক্টোবর বা নভেম্বর মাস কসমস ফুলের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ছায়াঘেরা অনুকূল পরিবেশ কসমস ফুলের পরাগয়ন হলেও সূর্যের আলোতে এর দ্রুত বিস্তার ঘটে। প্রাপ্তবয়স্ক এক একটি কসমস ফুল গাছ যথাক্রমে ২ থেকে ৪ ফুট অবধি লম্বা হয়ে থাকে। এই ফুল গাছ পরিচর্যায় অল্প পানি হলেও চলে। যার কারণে আপনি ইচ্ছা করলে টবেও কসমস ফুল গাছ লাগিয়ে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে, টবে সপ্তাহে একদিন পানি দিলেও গাছ সুন্দরভাবে বেরে উঠে। মনে রাখা একান্ত জরুরি যে, টবে লাগানো গাছটি কোনোক্রমেই হেলে না যায়। বিশেষ করে অনুর্বর মাটিই কসমস ফুল গাছের জন্য শ্রেয়। এতে গাছ যেমন সুস্থ থাকে, ফুলও সুন্দর হয়, হেলে পড়ার সম্ভাবনাও থাকেনা।
সূর্যমুখী
সূর্যমুখী ফুল শীতাকালীন পছন্দের ফুলগুলির মধ্যে একটি। মূলত সূর্যের দিকে তাক করে থাকার কারণে এই ফুলের নাম সূর্যমুখী। শীতে যতপ্রকার ফুল ফুটে থাকে তার মধ্যে সবচাইতে উজ্জ্বল ও আকৃতিতে বড় হয় সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখী ফুল হতে বিভিন্নপ্রকার গুনাগুন সমৃদ্ধ ভেষজ তেল সংগৃহীত করা হয়ে থাকে বলে এর চাহিদা বহুমাত্রিক। সূর্যমুখী ফুলের গাছ সাধারণত ৩০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়৷ বিশ্বের সর্বত্রই সূর্যমুখী গাছ তেল সংগ্রহের জন্য যে পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশে তেল সংগ্রহের পাশাপাশি প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের ব্যবহার বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও এলাকা ভিত্তিক যেমন-রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, নাটোর ও বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তেলের জন্য সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হতে দেখা যায়। গাছ রোপণের পাসাপাশি বীজ রোপণের মধ্য দিয়ে আপনি ইচ্ছা করলে সূর্যমুখীর চাষ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভালো ও উৎকৃষ্টমানের বীজ নির্ণয় করে বীজ রোপণ করাটাই স্রেয়।
এই দৃষ্টিনন্দন ফুলটি আপনিও ইচ্ছা করলে বাড়ীর আঙ্গিনাসহ বাসার বারান্দায় টবে লাগাতে পারেন। বাসা-বাড়ীর বারান্দায় সূর্যমুখীর চাষ করতে আপনাকে অবশ্যই বেশ বড় টব সংগ্রহ করতে হবে। সূর্যমুখী গাছের জন্য সূর্যের তাপ ও পানি দুটিই প্রয়োজন হয়। এই প্রকৃতির গাছকে সতেজ রাখতে এবং নিয়মিত মাটি ভেজা রাখতে প্রতিদিন নিয়মমাফিক দুবেলা করে গাছে পানি দেওয়াটাই উত্তম। আবার গাছের গোড়ায় জাতে পানি না জমে সেজন্য অবশ্যই পরিমিত পানি দিতে হবে৷
চন্দ্রমল্লিকা
চন্দ্রমল্লিকা ফুল শীতকালীন হরেক রকমের ফুলগুলোর মধ্যে আরও একটি পছন্দনীয় ফুল। চন্দ্রমল্লিকা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল CHRYSANTHEMUM
INDICUM। গ্রীক থেকে উৎপত্তি চন্দ্রমল্লিকার ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ক্রিসেনথিমাম। ক্রিসস মানে সোনা, আর এনথিমাম মানে ফুল। পরিপূর্ণ এই ফুলের নাম দাঁড়ায় সোনার ফুল। এশিয়া কন্টিনেন্টাল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেও এই ফুলটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে চন্দ্রমল্লিকার ৩টি জাত খুবই লক্ষণীয়, তা হল-তিন রঙা চন্দ্রমল্লিকা, মালীর চন্দ্রমল্লিকা ও তোরা চন্দ্রমল্লিকা। জাত ও বর্ণভেদে চন্দ্রমল্লিকার রঙও ভিন্ন হয় থাকে, যেমন-বাসন্তী, হালকা বেগুনি, উজ্জ্বল হলুদ ও হালকা গোলাপি ইত্যাদি রঙের।
চন্দ্রমল্লিকা মূলত কাটিং বা বীজ হতে সৃষ্ট ফুল গাছ। কাটিং থেকে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছ উৎপন্ন করতে সময় লাগে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ দিন। বছরের জুলাই এর শেষের দিকে কাটিংখানা টবে রোপণ করিয়ে রাখতে হবে। তারপর ১৫ থেকে ২০ দিন অতিবাহিত হলে পরবর্তীতে একখানা বড় আকৃতির টবে সেটি লাগাতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার জন্য উর্বর প্রকৃতির হালকা দোআঁশ মাটিই বেশ উপযোগী। সূর্যমুখী ফুল গাছের ন্যায় চন্দ্রমল্লিকা গাছের গোড়াতেও পানি যেন না জমে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। চন্দ্রমল্লিকার জন্যও পর্যাপ্ত রোদ্র প্রয়োজন বিধায় যেখানে রোদ লাগে সেখানে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ রোপণ করা উচিৎ।
গাজানিয়া
শীতের ফুল গুলোর মধ্যে আরও একটি অন্যতম আকর্ষণীয় ফুল হলো গাজানিয়া ফুল। গাজানিয়া ফুলের ইংরেজি প্রতিশব্দ হোল TREASURE FLOWER। মূলত গাজানিয়া ফুল বিদেশি জাতের হলেও বাংলাদেশেও শীতকালীন ফুল হিসেবে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে। আকৃতির দিক থেকে গজানিয়া গাছ অনেকটাই ছোট আকৃতির হয়। উচ্চতায় প্রায় ২০ থেকে ৫০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাজানিয়া ফুল দেখতে অনেকটাই উজ্জ্বল ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এই ফুলের পাঁপড়ির মাঝে খয়েরী ডোরাকাটা দাগ থাকার কারণে অন্য প্রজাতির উজ্জ্বল হলুদ ফুলের চাইতে একে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় লাগে।এছাড়াও গাজানিয়ার কিছু জাত রয়েছে যাতে অন্য রঙেরও ফুল ফোটে থাকে, যেমন-লাল, সাদা, বাদামী ও ঘিয়া। আফ্রিকান জাতের শীতকালীন এই ফুলটি প্রথমত সকাল বেলায় ফোটে থাকে এবং বিকালে ঝরতে থাকে। চন্দ্রমল্লিকার অনুরূপ এই ফুলটি উৎপাদন প্রক্রিয়াও বীজ থেকে। কিন্তু কাটিং বা শাখা থেকে চারা তৈরী করাই উত্তম। এ জাতীয় ফুল গাছের গোঁড়ায় কোনোভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবেনা। চন্দ্রমল্লিকার ন্যায় গাজানিয়া ফুল গাছের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত রোদ্র প্রয়োজন হয়। গাজানিয়া চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটিই সর্বাপেক্ষা উত্তম। তবে, এ জাতীয় ফুল গাছ টবে লাগাতে চাইলে মাটির সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার মিশ্রিত করে তারপর লাগাতে হবে।
ডেইজি
শীতকালীন আরও একটি সুরভিত ফুলের মধ্যে ডেইজি ফুল অন্যতম। ডেইজি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো CHRYSANTHEMUM CARINATUM। ডেইজি ফুল আকৃতিতে ছোট প্রকৃতির হলেও খালি চোখে দেখতে অনেকটা ছোট সূর্যমুখীর ফুলের ন্যায় হয়ে থাকে। কিন্তু সূর্যমুখীর ন্যায় এই উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডেইজি ফুলটি সূর্যের দিকে তাক করে থাকেনা বরং এই ফুলটি রীতিমতো আকাশের দিকে তাক করে উঠে।
আরও পড়ুনঃ প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেইজি ফুল বিদেশি প্রজাতির হওয়া সত্ত্বেও এটি বাংলাদেশী আবহাওয়াতে বেশ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ডেইজির গাছ দেখতে ১-১.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফুলটি গুল্ম প্রকৃতির এবং খুব দ্রুতই এটি বৃদ্ধি পায়। ডেইজি ফুল ফোটার আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে শীতকালে এটি ফোটার পর বসন্তকালের মাঝপথে গিয়ে ফুল ফোটা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়।
আপনি ইচ্ছা করলে বাজারে শীতকালীন অন্যান্য ফুলের বীজের পাশাপাশি ডেইজি ফুলেরও উন্নতমানের বীজ পেতে পারেন। বীজ রোপণ দ্বারাই ডেইজি ফুল গাছের উৎপাদনের সঠিক ও লাভজনক পন্থা। ডেইজির চাষের জন্য বিশেষ করে বেলে দোঁআশ মাটি ও পর্যাপ্ত সূর্যালোক বিশেষ উপযোগী। প্রকৃতপক্ষে অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ ডেইজি ফুল গাছ রোপণের মুখ্যম সময়।
ডায়ান্থাস
গ্রীক শব্দ থেকে উৎপত্তি ডায়ান্থাস নামীয় শীতকালীন ফুলটি একটি আকর্ষণীয় ফুল। যার আভিধানিক অর্থ ঈশ্বরের ফুল। প্রাচীন গ্রীস সাম্রাজ্যে এই ফুল প্রধানত প্রার্থনা ও পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত হতো। ডায়ান্থাস ছোট আকৃতির ফুল হলেও এর বিভিন্ন জাত রয়েছে। প্রতিটি জাতই একটি অপরটির চাইতে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। তাই, ডায়ান্থাস ফুলকে অনেকেই সুইট উইলিয়াম বা বেবী ডল হিসেবে জানে।
ডায়ান্থাস ফুল চাষে একটি বড় সুবিধা এই যে, এটি চাষের ক্ষেত্রে তেমন একটা পরিচর্যার দরকার হয় না। সারাদিন রোদ প্রয়োজন না হলেও দিনের মধ্যবর্তী সময়ে তিন-চার ঘন্টা রোদ গাছের গাঁয়ে পড়লেই সুন্দর ফুল ফোটে থাকে। বিশেষ করে উর্বর বেলে দোআঁশ মাটিতেই ডায়ান্থাস ফুল ভালোভাবে বেড়ে উঠে। মূলত শীতকাল শুরুর প্রাক্কালে ডায়ান্থাস ফুল ফোটা শুরু করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে শীতকালীন বাহারি ফুলের সুভাস সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পোষণ করলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url