OrdinaryITPostAd

মাছরাঙা পাখির গায়ের রং ও জীব বৈচিত্র্য

পৃথিবীতে গোত্র, বর্গ ও গণ নির্বিশেষে পাখির প্রায় ১০ হাজার প্রজাতি রয়েছে। তবে, সকল প্রকৃতির জীবন্ত পাখিই নিঅর্নিথিস উপশ্রেণীর অন্তর্গত বলে মনে করা হয়। কিন্তু, মাছরাঙা পাখি হল কোরাসিফর্মস প্রজাতির অন্তর্গত একদল অত্যন্ত উজ্জ্বল রঙের ছোট বা মাঝারি আকৃতির পাখি। মাছরাঙা পাখিটি মূলত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ব্যতীত প্রায় গোটা বিশ্বে তার ব্যপ্তি রয়েছে। মাছরাঙা পাখির গায়ের রং ও বৈচিত্রের দিক থেকে বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে, যেমন-নীল, সবুজ, লাল, হলুদ ও কমলা। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা মাছরাঙা পাখির গায়ের রং ও জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। 
সংগৃহীতঃ মাছরাঙা পাখি মাছ শিকারি প্রতীকী ছবি।
পোস্টসূচিপত্রঃষড়ঋতু অঞ্চলভিত্তিক দেশ মাছরাঙা পাখির জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। তবে, মাছরাঙা পাখি তার আবাসস্থলের দিক থেকে চিন্তা করলে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। মাছরাঙা পাখির আবাসস্থল বলতে গেলে নদী, হাওর, খাল-বিল, মিঠা পুকুর, উপকূলীয় এলাকা ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। মাছরাঙা পাখি সাধারণত জলাশয়ের নিকটে খাড়া পাড়ের গর্তে বসবাসের জন্য বাসযোগ্য আবাসস্থল বানিয়ে থাকে। নিম্নে মাছরাঙা পাখির বৈজ্ঞানিক নাম, উৎপত্তিস্থল, প্রকারভেদ ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়া হ'ল।

মাছরাঙ্গা পাখির বৈজ্ঞানিক নাম

পাতি মাছরাঙা (বৈজ্ঞানিক নাম: Alcedo atthis) আলসেডিনিডি (Alcedinidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আলসেডো (Alcedo) গণের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মৎস্যশিকারী পাখি।

মাছরাঙ্গার পাখির উৎপত্তিস্থল

সৃষ্টির আদ্যপান্ত থেকে মাছরাঙা পাখির জীববৈচিত্র্য পৃথিবী জুড়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তবে, অস্ট্রালেশিয়োর যুগে মাছরাঙ্গা পাখির বিস্তৃতি ছিল ব্যাপক হারে। বর্তমান বিশ্বে মৌসুমী জলবায়ুপূর্ণ এলাকায় মাছরাঙ্গা পাখির চারণ প্রতিনিয়তই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে সৌন্দর্যমন্ডিত এই মাছরাঙ্গা পাখিটি এখন বিশেষ করে হাওর-বাওর এলাকাতেও দেখা মিলে। 

মাছরাঙ্গার পাখির প্রকারভেদ

জানা যায়, সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছরাঙার দেখা মিলে। যেমন-মেঘহও মাছরাঙা, খয়রাপাখ মাছরাঙা, পাতি মাছরাঙা এবং ধলাগলা মাছরাঙা অন্যতম। মাছরাঙ্গা পাখির রূপ ও বৈচিত্রের দিক থেকে ভিন্নভাবে এর শ্রেণীবিন্যাস হয়ে থাকে। 

মূলত মাছরাঙ্গা পাখিকে শ্রেণীভেদে বিভিন্ন প্রজাতিতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন-
  • ২৩টি বর্গ;
  • ২০৫৭টি গণ;
  • ১৪২টি গোত্র; 
  • ৯৭০২টি প্রজাতি;
তবে, প্রতিনিয়তই পুরোনো প্রজাতিকে বিভাজন করে নতুন নতুন মাছরাঙ্গা প্রজাতির আবির্ভাব হতে দেখা গেছে। মাছরাঙ্গা পাখিটি কখনও অ্যালসিডিনিডি গোত্র আবার কখনোবা অ্যালসিডিনিস উপবর্গের প্রজাতি নামে বেশ পরিচিত। এই অ্যালসিডিনিস উপবর্গের রয়েছে ৩টি বিশেষ গোত্র, যেমন-গাঙ মাছরাঙা, গেছো মাছরাঙা ও পান মাছরাঙা। 

মাছরাঙা পাখির বর্ণ

বর্ণের দিক থেকে মাছরাঙ্গা পাখি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, যেমন- লাল, নীল, হলুদ, সবুজ ও কমলা। মাছরাঙ্গা পাখির পালক খুবই উজ্জ্বল প্রকৃতির ও আকর্ষণীয় হয়। এদের গায়ের রঙ, আবাসস্থল ও শিকারের ধরন বিভিন্ন ধরনের হয়। উধাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে বনজ পাখির নাম। এই ধরনের পাখি মূলত সবুজ রঙের হয় বলে গাছপালার  আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে।

মাছরাঙা পাখির শারীরিক গঠন

সাধারণত মাছরাঙা পাখির মাথা দেহের তুলনায় অনেকাঙ্কশে বড় হয়। মুখ হয় অনেকটা লম্বা, ধারালো ঠোঁট, চোখা এবং পা ও লেজ হয় খাটো আকৃতির। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাছরাঙ্গা পাখির রঙ হয় উজ্জ্বল ও দৃষ্টিনন্দন। তবে, পুরুষ ও স্ত্রী মাছরাঙা পাখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। 

মাছরাঙা পাখির আবাসস্থল

মাছরাঙা পাখি তার আবাসস্থল হিসেবে নিরক্ষরেখা অঞ্চলকে বসবাসের জন্য সাধারণত বেছে নেয়। কিন্তু, মাছরাঙা পাখির একটি বৃহৎ অংশকে বনাঞ্চলেও দেখা মিলে। সরীসৃপ প্রাণীর ন্যায় মাছরাঙারাও জলাশয়ের পাশে খাড়া পাড়ের গর্তে বাসা বানিয়ে থাকে। কিছু দ্বীপবাসী প্রজাতির মাছরাঙা রয়েছে যারা বৈশ্বিকভাবে বিপদগ্রস্ত বলে বিবেচিত। এছাড়া বন উজাড় করার ফলে বনের মাছরাঙাগুলোর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

শিকারি মাছরাঙা পাখি 

মাছরাঙা পাখি বিভিন্ন ধরনের প্রাণী শিকার করে থাকে তার মধ্যে খাল-বিল, জলাশয়ে মাছ শিকার তাদের পছন্দের শিকারের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া, অন্যান্য যাবতীয় শিকারের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির পোকা, ব্যাঙ, পাখি এমনকি ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। 

মাছরাঙা পাখির প্রজনন

মাছরাঙা পাখি সাধারণত গাছের গর্ত বা ঝোপঝাড়ে বাসা বানিয়ে বসবাস করে থাকে। মাছরাঙা পাখির প্রজনন দিক চিন্তা করলে এরা সাধারণত দুইটি অথবা চারটি ডিম ভূমিষ্ঠ করার সক্ষমতা রাখে। গর্ভকালীন সময় থেকে শুরু করে প্রসবকালীন পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ২১ দিন। তবে, বাচ্চা মাছরাঙা পাখি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আঁতুড় ঘর থেকে বের হতে সময় নেয় আনুমানিক দুই মাস।

চলুন এবার কিছু মাছরাঙা পাখির বাইওগ্রাফি সম্পর্কে জেনে নেই। 

নিম্নে বিভিন্ন প্রকৃতির মাছরাঙা পাখির জীবনচক্র ও বায়োগ্রাফি তুলে ধরা হ'লঃ-

সংগৃহীতঃ মেঘহও মাছরাঙার পাখির প্রতীকী ছবি।

মেঘহও মাছরাঙা পাখি

মেঘহও মাছরাঙা পাখি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয়, এ জাতীয় পাখি মেঘহও Halcyonidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Pelargopsis এর প্রজাতির বৃহৎ আকৃতির মাছরাঙা। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখিকে সাধারণত গুরিয়াল নামে অবহিত করা হয়।

শারীরিক গঠনঃ
মেঘহও মাছরাঙা পাখি সাধারণত নীল বর্ণের ডানা বিশিষ্ট বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখির শারীরিক গঠনের দিক থেকে দৈর্ঘ্য হয় আনুমানিক ৩৮ সেঃ মিঃ, ডানা হয় ১৫.৭ সেঃ মিঃ, ঠোঁট হয় প্রায় ৯ সেঃ মিঃ, পায়ের দৈর্ঘ্য হয় ২ সেঃ মিঃ এবং লেজ হয় তুলনামলক ১০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছরাঙা পাখি দেখতে অনেকটাই একই রকম হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মাছরাঙা পাখির মাথার চাঁদি হয় উজ্জ্বল বাদামি আকৃতির। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক মাছরাঙা পাখির বুকে থাকে কালো ডোরা আর দেহে কমলার ভাগ বেশি।

আচরণগত বিশিষ্টঃ
মেঘহও মাছরাঙা পাখি সাধারণত জলাধার, বিল, হাওঁর-বাঁওড়, সেচের নালা, নদীর পাশের আবদ্ধ জল, জোয়ারে পরিপূর্ণ হওয়া খাঁড়ি এবং পুকুরে চলাচল করে থাকে। প্রায়ই সময় এ জাতীয় মাছরাঙা পাখিকে জোড়ায় জোড়ায় দেখতে পাওয়া যায়। পানির আসেপাশে গাছের উঁচু ডাল ও খুঁটিতে বসে শিকারের জন্য উৎ পেতে থাকে। পানির উপরে বা বন জঙ্গলে শিকার করার মতো কিছু দেখতে পেলে উচ্চস্বরে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার করে থাকে। 
খাদ্য গ্রহণঃ
মেঘহও মাছরাঙা পাখি সাধারণত মাছ, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, পাখির বাচ্চা, ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে থাকে। তবে, মাছ শিকার করে খাদ্য গ্রহণ করা এদের প্রধান পছন্দ।

প্রজনন ক্ষমতাঃ
মেঘহও মাছরাঙা পাখি সাধারণত জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী সময়কে প্রজনন ঋতু হিসেবে বেঁচে নেয়। তবে, স্থান ও পাত্রভেদে প্রজননের মৌসুম পরিবর্তন হয়ে থাকে। দেখা যায় জলাশয়ের খাড়া পাড়ে প্রায় ১০০ সেঃ মিঃ দীর্ঘ ও ১০ সেঃ মিঃ চওড়া গর্ত করে এজাতীয় মাছরাঙা পাখি নিজেদের ঘর বানিয়ে বসবাস করে থাকে। অনেকসময় দেখা যায় মেঘহও মাছরাঙা পাখি গাছের গর্তেও ঘর করে। ঘর বানানো শেষ হলে এরপর বাচ্চা নেয়ার চিন্তা করে। মেঘহও মাছরাঙা পাখি একসাথে আনুমানিক ৪ থেকে ৫টি ডিম পাড়তে সক্ষম যার সাইজ হয় ৩.৬ × ৩.১ সেঃ মিঃ।

আবাসস্থলঃ
মেঘহও মাছরাঙা পাখির আবাসস্থল মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেশগুলো যেমন-বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ব্রুনাই ও লাওস। 

কালবিবর্তনঃ
দিনে দিনে কালবিবর্তনে মেঘহও মাছরাঙা পাখি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত মেঘও মাছরাঙ্গা পাখিটি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমশই কমতে শুরু করেছে। যার কারণে (I.U.C.N) এই প্রজাতিটিকে বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে জানা যায়। তবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত রেখেছে। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এদের মোট সংখ্যা সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি এদেরকে ঋতু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।

সংগৃহীতঃ খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির প্রতীকী ছবি।

খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখি

খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয়, এ প্রজাতিটি Alcedinidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Pelargopsis গণের এক প্রজাতির বৃহদাকায় মাছরাঙা পাখি। খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখিটি গায়ের রং এর ভিত্তিতে বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা হয়ে থাকে। এই প্রজাতির মাছরাঙা পাখিটি সাধারণত লাল ঠোঁট ও বাদামি ডানা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। 

শারীরিক গঠনঃ
খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখিটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৩৬ সেঃ মিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির মাথা ও ঘাড় হয় বাদামি-কমলা, কাঁধ-ঢাকনি, ডানা হয় কালচে ও বাদামি প্রকৃতির এবং পিঠের ও কোমরের অংশ হয় নীল। প্রান্ত-পালক ডানার বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় বাদামি; গলা, বুক, পেট বাদামি-কমলা। ঠোঁট আগা ঘন কালচে-বাদামি, ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ পর্যন্ত একটি গাঢ় বাদামি টান চলে গেছে। অন্যদিকে খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইট-লাল। এই প্রজাতির মাছরাঙা পাখির পা ও পায়ের পাতা হয় লালচে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির দেহ হয় কমলা, আর কাঁধ হয় ঢাকনির কিনারা। ডানার পালক ঢাকনি ফিকে রঙের। তাছাড়া ঘাড়ে কালো ডোরা থাকে এবং দেহতল হয় কালো বর্ণের।

আচরণগত বিশিষ্টঃ
খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির আচরণগত বিশিষ্ট বলতে এ জাতীয় মাছরাঙা পাখি জোয়ার-ভাটায় সিক্ত নালা, প্যারাবনের প্রবহমান নদীতে ও খাল-বিলে বিচরণ করে থাকে। অনেক সময় এ জাতীয় পাখি একা বা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এরা সাধারণত গাছের উঁচু ডাল থেকে পানির উপরে ঝাঁপ দিয়ে মাছ শিকার করে খায়। খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখি ওড়ার সময় শব্দ করে ডেকে থাকে। 
প্রজনন ক্ষমতাঃ
খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির প্রজনন মৌসুম হ'ল মার্চ ও এপ্রিল। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখি সাধারণত জলাশয়ের ধারে খাড়া পাড়ে গর্ত বানিয়ে বাসা বেঁধে থাকে। খাড়া পাড়ের গর্তের মাপ হয় ১০ সেঃ মিঃ চওড়া এবং ৫০ থেকে ৬০ সেঃ মিঃ দৈর্ঘ্য। এরা প্রাথমিক অবস্থায় ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৪টি। পাড়া ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৮ থেকে ২০ দিন।

খাদ্য গ্রহণঃ
খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখির খাদ্য গ্রহণের তালিকায় রয়েছে মাছ, কাঁকড়া ও সরীসৃপ ছোট প্রজাতির প্রাণী।

আবাসস্থলঃ
খয়রাপাখ মাছরাঙার পাখির আবাসস্থল মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তথা-বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী ম্যানগ্রোব অঞ্চল নামে পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত সুন্দরবনের বনাঞ্চলে ও তার আশপাশের প্রবাহমান পানিতে খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখিকে দেখতে পাওয়া যায়। 

কালবিবর্তনঃ
দিনে দিনে কালবিবর্তনে খয়রাপাখ মাছরাঙা পাখিও অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। সমগ্র বিশ্বে আনুমানিক ১ লক্ষ ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের বিচরণ। ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমতে শুরু করেছে। তবে, বাংলাদেশী বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বিশ্বায়নে এদের প্রাপ্ত সংখ্যা সম্পর্কে তেমন একটা জানা না গেলেও, সংখ্যায় এরা খুবই বিরল।

সংগৃহীতঃ পাতি মাছরাঙা পাখির প্রতীকী ছবি।

পাতি মাছরাঙা পাখি

পাতি মাছরাঙা পাখি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, এই প্রজাতিটি সাধারণত ছোট মাছরাঙা Coraciiformes বর্গের এবং আলসেডিনিড গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মাছ শিকারী পাখি।

শারীরিক গঠনঃ
পাতি মাছরাঙা পাখি মুলত একটি ছোট আকৃতির পাখি। এরা দৈর্ঘ্যে আনুমানিক ১৬ সেঃ মিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতি মাছরাঙা পাখির ডানার পরিমাপ ২৫ সেঃ মিঃ এবং ওজন হয় ৩৪ থেকে ৪৬ গ্রাম। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখিদের দেহের তুলনায় মাথা হয় বড়, লম্বা, ধারালো ও চোখা চঞ্চু, পা ও লেজ হয় খাটো আকৃতির। অধিকাংশ পাতি মাছরাঙা পাখির শরীরের বর্ণ হয় উজ্জ্বল। তবে পুরুষ পাতি মাছরাঙা পাখি ও স্ত্রী জাতের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

আচরণগত বৈশিষ্ট্যঃ
পাতি মাছরাঙা পাখির আচরণগত বৈশিষ্ট্য হল, এদেরকে গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের স্বচ্ছ ও ধীরগতির ঝর্ণা, নদী ও লেকের পানিতে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত ঝোপঝাড়ে বেড়ে উঠা ডালে পাতি মাছরাঙা পাখি বসে থাকে। এক্ষেত্রে পাতি মাছরাঙ্গা পাখি অত্যধিক শান্ত ও ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির পাখি। জলাশয়ের কিনারায় বিশেষ করে কোন মরা গাছের ডালে স্থির হয়ে বসে থাকে। পানির উপরে মাছ কিংবা জলজ ছোট প্রাণী দেখা মাত্রই তার উপরে ঝাপিয়ে পরে। কিছু বুঝতে পারার আগেই পাতি মাছরাঙা পাখি তার ধারালো ঠোঁট দিয়ে তা ধরে ফেলতে সফল হয়। পাতি মাছরাঙা পাখি বিভিন্ন ধরনের প্রাণী শিকার করে থাকে। তবে তার একটি বড় অংশ জুড়ে আছে মাছ শিকার। 
খাদ্য গ্রহণঃ
পাতি মাছরাঙা পাখি মাছ ব্যতীত বিভিন্ন উপায়ে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে যেমন-ব্যাঙ, পোকামাকড়, ছোট সরীসৃপ জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী।

প্রজনন ক্ষমতাঃ
পাতি মাছরাঙা পাখির প্রজনন মৌসুম হ'ল সাধারণত ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী হতে জুন মাসের মধ্যবর্তী  পর্যন্ত। এসময় পাতি মাছরাঙা পাখি জোড়ায় জোড়ায় একত্রিত থাকে। অন্য সকল মাছরাঙা পাখির ন্যায় পাতি মাছরাঙা পাখিও গর্তে বাসা করে থাকে। জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী খাড়া পাড়ের গর্তে পাতি মাছরাঙা পাখি সাধারণত বসবাসের জন্য বাসা বানিয়ে থাকে। বাসা বানানোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে এরা একে অন্যকে সাহায্য করে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়তে থাকে। বাসা বানানো হলে স্ত্রী মাছরাঙা পাখি ডিম পাড়া শুরু করে। জানা যায়, স্ত্রী পাতি মাছরাঙা পাখি একসাথে ৫-৭ টি ডিম পাড়তে সক্ষম। স্বামী ও স্ত্রী পাতি মাছরাঙা পাখি পাড়া ডিমগুলোকে দিনের বেলা তা দেয়। কিন্তু রাতের বেলায় শুধুমাত্র স্ত্রী পাখি ডিমগুলিকে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৯ বা ২০ দিন সময় লেগে যায়। বাচ্চা প্রসব হওয়ার পরে তারা আঁতুড় ঘর থেকে বের হতে সময় নেয় প্রায় ২৪ বা ২৫ দিন ।

আবাসস্থলঃ
সাধারণত পাতি মাছরাঙা পাখির আবাসস্থল হিসেবে ধরা হয় বাংলাদেশ, ভারত ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে।

কালবিবর্তনঃ
দিনে দিনে কালের বিবর্তনে পাতি মাছরাঙা পাখিও অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। পাতি মাছরাঙা পাখির সমগ্র বিশ্বে আনুমানিক ১ কোটি ৭৯ লক্ষ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাদের বাস। ব্যাপকহারে বিস্তৃত বলে (I.U.C.N) এই প্রজাতিটিকে আকর্ষিকভাবে বিপদগ্রস্ত ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনেও এই পাতি মাছরাঙা পাখিকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ধারণা করা হয়, পাতি মাছরাঙা পাখি সমগ্র বিশ্বে আনুমানিক ৬ লাখেরও কম রয়েছে।

সংগৃহীতঃ ধলাগলা মাছরাঙা পাখির প্রতীকী ছবি।

ধলাগলা মাছরাঙা

ধলাগলা মাছরাঙা পাখি সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, এই প্রজাতিটি সাধারণত Halcyonidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Halcyon গণের অন্তর্ভুক্ত এক জাতের গেছো মাছরাঙা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।

শারীরিক গঠনঃ
ধলাগলা  সাধারণত দৈর্ঘ্যে ২৮ সেঃ মিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক ধলাগলা মাছরাঙা পাখির মাথা ও ঘাড় হয় গাঢ় বাদামি রঙের। তবে এদের পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত রং হয় উজ্জ্বল নীল প্রকৃতির। সবুজ ডানার উপরিভাগ হয় গাঢ় বাদামি, তবে ডানার মধ্যবর্তী অংশে কালচে পালক থাকে। থুতনি, গলা ও বুকের অংশের রং হয়ে থাকে ধবধবে সাদা। ঠোঁটের বর্ণ হয় কমলা-লাল। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখির চোখের মণি হয় বাদামি রঙের বলয় লালচে। এদের পা ও পায়ের পাতা হয় প্রবাল লাল। কিন্তু, পুরুষ ও স্ত্রী জাতের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই।

আচরণগত বৈশিষ্টঃ
ধলাগলা মাছরাঙা পাখির প্রধান আচরণগত বৈশিষ্ট হল, এরা বেশিরভাগই বিচরণ করে উপকূলীয় অঞ্চলের জলাশয়ের সন্নিকটে। তাছাড়া শুষ্ক, পাতাঝরা বনের পাদদেশে বা আবাদি জমির আশেপাশে ধলাগলা মাছরাঙা পাখিকে উড়তে দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় ধলাগলা মাছরাঙা পাখিকে বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকতেও দেখা যায়। এ জাতীয় মাছরাঙা পাখি যখন কোথাও বিচরণ করে তখন তাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়ও দেখা  যায়। ধলাগলা মাছরাঙা পাখির কণ্ঠস্বর হয় কর্কশ প্রকৃতির। 
খাদ্য গ্রহণঃ
ধলাগলা মাছরাঙা পাখি সাধারণত পোকা জাতীয় খাবার যেমন- ঝিঁঝিপোকা, গুবরেপোকা, পঙ্গপাল, ডানাওয়ালা উইপোকাসহ নানা পোকাও খায়। এমনকি ব্যাঙ, টিকটিকি, ইঁদুরের বাচ্চাও শিকার করে।

প্রজনন ক্ষমতাঃ
ধলাগলা মাছরাঙা পাখির প্রজনন মৌসুম হ'ল সাধারণত বসন্তের শেষ সময়। ঐ সময়ে পুরুষ ও স্ত্রী মাছরাঙা পাখি উভয়ই সংস্পর্শে থাকে তথা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে পছন্দ করে। একই সাথে পরস্পর মিলে ঘর বাঁধতে শুরু করে। এ জাতীয় পাখির আবাসস্থল অন্য পাখির তুলনায় একটু ভিন্নতর হয়। ধলাগলা মাছরাঙা পাখি অন্য মাছরাঙ্গার ন্যায় শুকনো পাতা অথবা খড়কুটো দিয়ে বাসা গড়ে না। এ জাতীয় পাখি খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর পাড়ের খাড়া গর্তে বাসা বানিয়ে থাকে। খাড়া গর্তের বাসায়  তারা অন্তত ৪-৭টি ডিম পেড়ে থাকে। 

আবাসস্থলঃ
ধলাগলা মাছরাঙা পাখির আবাসস্থল মূলত বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি  দেশে দেখা মিলে। তবে বুলগেরিয়া ও তুরস্কেও এদের বেশ আধিক্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ৭১ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে এদের আবাসস্থল। বিগত প্রায় কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়তে আছে।

প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মাছরাঙা পাখির গায়ের রং ও জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানলাম। ভবিষ্যতে আড়ও এমন জানা-অজানা বিষয় নিয়ে আর্টিকেল তৈরি করে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হবো এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের মতো বিদায় নিলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪