OrdinaryITPostAd

রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

উত্তরাঞ্চল তথা রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, চিকিৎসা তথা নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুবিধার্থে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি একটি ট্রেন জনগণের বড়ই আকাঙ্ক্ষা ছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার্থে সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারত সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী'র মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মধ্যে রাজশাহী-কলকাতা একটি সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু সম্ভাবনার নতুন দুয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পোস্টসুচিপত্রঃগত ২২ জুন ২০২৪ তারিখে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দুই দেশের কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসা ১৩টি উদ্যোগের মধ্যে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার সৃষ্টির অগ্রযাত্রায় রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করার বিষয়টিও উঠে আসে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন এই ট্রেনটি চালু হওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এলাকার সকল মহলের সাধারণ জনগণের মধ্যে আশার আলো হিসেবে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। প্রায় ৭৭ বছর পর আবারও চালু হতে যাচ্ছে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি ট্রেন।

রাজশাহী-কলকাতা যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস 

ইতিহাসবিদগণের মতে, ১৯০৯ সালে এই রুট দিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের সাথে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রথম চালু করে ব্রিটিশ সম্রাজ্য। একসময় ভারতের স্বাধীনতার স্থপতি মহাত্মা গান্ধীও এই রুট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তির পরেও চালু ছিল রাজশাহী-কলকাতা এই রুটটি।
একসময় রাজশাহী জেলা রেল যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের মালদা ও মুর্শিদাবাদ হয়ে কলকাতার সাথে যুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনামল শেষ হলে পাকভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান নামক একটি দেশের জন্ম হয় যা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের সৃষ্টি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেও রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ সহ ভারতের ঐতিহাসিক স্থান দর্শনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনের তাগিদে এখন অবধি ভারত ভ্রমণ রক্ষা করে চলেছে। রাজশাহী-কলকাতা রুট প্রতিষ্ঠার পর, থেকে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রক্ষা করে চলেছে। রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রুট দিয়ে রাজশাহী-কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৩০০-৪০০ কি.মি.। এ রুট দিয়ে কলকাতা পৌঁছাতে আনুমানিক সময় লাগতে পারে প্রায় ৮ ঘণ্টা। এ রাজশাহী-কলকাতা রুটটি পুনরায় চালু হলে ধারণা করা হয়, রাজশাহী অঞ্চল ও ভারতের মধ্যে এক সেতু বন্ধন সৃষ্টি হবে এবং দুই দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখবে। এছাড়া, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঢাকা-কলকাতা ১টি ও খুলনা-কলকাতা ১টি মোট ২টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এইবার রাজশাহী-কলকাতা রুট চালু হলে তৃতীয় বহিঃবাংলাদেশ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। তবে, বাংলাদেশ রেলওয়ের সীমান্ত এলাকার স্টেশন হিসেবে রহনপুর স্টেশনে রেল পরিবহনে চলাচলকারী যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের কাজ করা গেলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার সাধারণ জনগন খুবই উপকৃত হবে। 
জানা যায়, ১৯৯০ সালে রাজশাহী-কলকাতা এই রুট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল মালবাহী ট্রেন প্রথম চালু হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও বেশি পুরাতন বাণিজ্য কেন্দ্র রহনপুর। রহনপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার সিঙ্গাবাদ স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১০ কিঃ মিঃ। আর সেখান থেকে পুরোনো মালদহ স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিঃ মিঃ। আপনি শুনে আনন্দিত হবেন যে, পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গাবাদ স্টেশন হতে সমগ্র ভারতে রেলপথে সহজে যাতায়াত করা যায়। এছাড়া, অদুর ভবিষ্যতে এই রুট দিয়ে নেপালের সাথেও রেল যোগাযোগ চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। 

রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের সাথে একটি নিবীর সম্পর্ক রয়েছে। এই রুট দিয়ে রাজশাহী-কলকাতা প্রস্তাবিত যাত্রীবাহী ট্রেনটি চলাচল করলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে এমনটি প্রত্যাশা করছি।

রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

রাজশাহী শহর এশিয়াতে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি হিসেবে সুপরিচিত। ধারণা করা হয়, ভবিষ্যতে এই শহরের সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণ অনুরাগী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। ট্যুরিজম সংস্থার মতে, রাজশাহী-কলকাতা  নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এই অঞ্চলের পর্যটন খাত তরতর করে এগিয়ে যাবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি দ্রুততম সময়ে চালু হলে দুই দেশের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হবে এমনটি ধারণা পোষণ করেন দুইদেশের অর্থনীতিবীদরা। তাছাড়া, নিজেদের চিকিৎসা গ্রহণের কাজে, পারিবারিক, ব্যবসায়িক অথবা দর্শনার্থী হিসেবে ভারত ভ্রমণের প্রয়োজন হলে রাজশাহী-কলকাতা এই নতুন রুটটি চালু হলে আপনার আনন্দদায়ক ভ্রমণকে আরও সহজ করবে। অন্যদিকে, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আন্তঃ দেশীয় যোগাযোগ সুদৃঢ় হবে, বাড়বে রাজশাহীর গুরুত্ব এবং রাজশাহীতে প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।

প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু সম্ভাবনার নতুন দুয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির আদ্যোপান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪