মেদ কমানোর অভিনব পদ্ধতি
প্রবাদ আছে, স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। আমরা যদি স্বাস্থ্য সচেতন থাকি তাহলে আমাদের মন মানসিকতাও ভালো থাকে। তাইতো শরীর ভালো রাখতে গেলে আমাদের নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করা একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি আপনার পেটের মেদ কমানোর দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেদ কমানোর অভিনব পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পোস্টসুচিপত্রঃআমাদেরকে শারিরীকভাবে ফিট থাকতে গেলে নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই। তবে, শরীরচর্চার পাশাপাশি আপনার মেদ বাড়লো কি-না সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম অর্থাৎ শরীরচর্চা, সঠিক পরিকল্পনামাফিক জীবন-যাপন ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। এক্ষেত্রে, আপনি চাইলে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাতেও কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন-তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা, শর্করা জাতীয় খাবার কম খাওয়া এবং প্রয়োজনে প্রতিদিন সকাল ও রাত্রিতে দুই বেলা করে নিয়মিত রুটি খাওয়ার অভ্যাস করুন বেশ উপকার পেতে পারেন। প্রতিবছরই আমাদের বিভিন্ন সময়ে উৎসবের দিনগুলিতে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। সামাজিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজে ও অন্যের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ঈদের উৎসবের দিনগুলোতে আমরা প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু খাবার যেমন-মাংস, পোলাও, পুডিনং, দুধ সেমাই ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকি। যার কারণে আমরা শারীরিকভাবে হটাৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ি। ফলে শরীরে জমতে থাকে মেদ। চলুন আমরা জেনে নেই, আমাদের শরীর থেকে মেদ কমানোর কিছু অভিনব পদ্ধতি।
খাবারের পরে কুসুম গরম পানি পান
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে খাদ্য গ্রহণ একটি নিয়মিত অভ্যাস। আপনি যখন অত্যধিক পরিমাণে তেল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে শরীরে জমতে থাকে চর্বি মেদ। অতিমাত্রায় মেদ বৃদ্ধির কারণে আমাদের প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার ক্ষেত্রে এবং সুস্থভাবে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে মেদের আধিক্য একটি যন্ত্রণা। তাই উচ্চ মানের খাবারের পরে কুসুম গরম পানি পান করার মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট উপকার পেতে পারেন।
লেবু চা বা গ্রিন চা পান
চা আমাদের মৃতপ্রায় শরীরকে যেমন সতেজ রাখে, পাশাপাশি চা পান করার মাধ্যমে আমরা শরীরকে স্লিম রাখতে পারি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা চা পান করা ব্যতীত কল্পনাই করতে পারি না। এটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম চা পান করলে শরীরের অনেক ক্লান্তি দূর করে থাকে। আর আপনি যদি চায়ের সাথে লেবু মিশ্রিত করে নিয়মিত পান করেন এতে করে শারীরিক ভাবে যথেষ্ট উপকার পেতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি বাজারে নানা প্রজাতির চায়ের মধ্যে গ্রীন চা কে বেছে নিতে পারেন। কারণ গ্রীন চা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রয়েছে।
প্রাকৃতিক বীজ থেকে প্রাপ্ত উপাদান
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে মেদ কমানোর অভিনব পদ্ধতি খুঁজতে শুরু করি। তার মধ্যে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হল প্রাকৃতিক বীজ। বর্তমানে ঔষধি গাছ এবং প্রাকৃতিক বীজ ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সুপ্রাচীন কাল থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা জরিবুটিক গ্রহণ করতাম। দিন যতই গড়াচ্ছে, সময় যতই গড়াচ্ছে আমরা এলোপ্যাথিক ঔষধের চেয়ে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক গাছ-গাছালি ও বীজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এই সকল বীজ গ্রহণের উপকারিতা হিসেবে বিভিন্ন প্রকার জটিল রোগ যেমন-ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ফ্যাটি লিভার, চোখের জ্যোতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ফলপ্রশু কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে বিভিন্ন প্রকার বীজ। নিম্নে প্রাকৃতিক বিভিন্ন বীজ সম্পর্কে কিছুটা হলেও আপনাদেরকে ধারণা দিচ্ছিঃ-
চিয়া সিডঃ
চিয়া সিড পুষ্টিগুন সম্পন্ন উদ্ভিদ খাবার। পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে সুপারফুড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ এর মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত চিয়া সিড খাদ্য তালিকায় রাখার মাধ্যমে আপনি মেদ কমানোসহ শারীরিকভাবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ট উপকার পেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ পুষ্টিগুনে চিয়া সিড
সূর্যমুখী ফুলের বীজঃ
সূর্যমুখী ফুলের বীজে রয়েছে নানাবিধ প্রোটিন, ভিটামিন-ই, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও ফ্যাট উপাদান যা আপনার খাবার খাওয়ার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মেদ ঝরাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এই সব উপাদানের দরুন খাবার খেতে অরুচি বা অনীহা সৃষ্টিতে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে।
কুমড়োর বীজঃ
কুমড়োর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক যা মেদ ঝরানোর পাশাপাশি পেশি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। অতিমাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে খিদে কম লাগে যার কারণে অপ্রয়োজনে খাওয়ার মন-মানসিকতা থেকে বিরত থাকা যায়।
তিসি বীজঃ
তিসি বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি নামক উপাদান। ওমেগা থ্রি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিসির বীজ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ওমেগা থ্রি এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, প্রোটিন ও ফাইবার যা দ্রুত ওজন কমাতে বা মেদ ঝরাতে যথেষ্ট কার্যকরী।
শণের বীজঃ
আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও দ্রুত ওজন কমাতে শণের বীজ খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শণের বীজ মস্তিষ্ক সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে। পাশাপাশি শণের বীজ পেশি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এই বীজে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি দ্রুত আপনার শরীরের মেদ ঝরাতে সহায়তা করে থাকে। তাই আমরা মেদ কমানো ও দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শণের বীজকে বেছে নিতে পারি।
মেদ কমানোর ক্ষেত্রে শসাঃ
মেদ কমানোর ক্ষেত্রে আরেকটি অভিনব পদ্ধতি হলো শসা খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। শসায় রয়েছে উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান যা আমাদের শরীরের ওজন ও মেদ কমানোসহ নানাবিদ উপকারে আসে। আপনি যদি নিয়মিত শসা খেতে পারেন তাহলে দ্রুত মেদ কমানো অসম্ভব কিছুই নয়। আমাদের শরীরে যেসব ভিটামিনের প্রয়োজন হয় তার অনেকটাই যেমন-ভিটামিন এ, বি ও সি শসার মধ্যে অত্যধিক পরিমাণে থাকে। সাধারণত ভিটামিন-এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মেদ কমানোর অভিনব পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url