মানবদেহের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল নানাবিদ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ
আপনার সু-স্বাস্থ্য গঠন এবং শরীরকে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ করার জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ফল-ফলাদি রাখা খুবই জরুরী। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নানাবিধ ফলের মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। ড্রাগন ফল একটি মিষ্টি জাতীয় ফল, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেকাংশে পাওয়া যায়। আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে মানব দেহের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল নানাবিদ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
পোস্টসুচিপত্রঃপৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। বিশ্বের অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এর ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। ড্রাগন ফল এক ধরনের ফণীমনসা (ক্যাক্টাস) জাতীয় ফল যা পিতায়া নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Hylocereus undatus। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ফলটিকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করে থাকে। সুদূর চীন দেশের মানুষ এটিকে ড্রাগন মুক্তার ফল, ভিয়েতনামে মিষ্টি ড্রাগন ফল, থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক ছাড়াও পৃথিবীর অনান্য দেশে একে স্ট্রবেরি নাশপাতি বা নানেট্টিকাফল নামে আখ্যায়িত করে থাকে। রং ও বৈচিত্রের দিক থেকে ড্রাগন ফল একাধিক রঙের হয়ে থাকে। তবে লাল রঙের ড্রাগন ফলটি সর্বত্রই বেশি চোখে পড়ে। ড্রাগন ফল মিষ্টি জাতীয় ফল হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
আরও পড়ুনঃ মেদ কমানোর অভিনব পদ্ধতি
ড্রাগন ফল বিদেশি জাতের ফল হলেও আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষীদের ব্যাপক চাষ করতে দেখা যায়। যার কারণে দেশের খুচরা বাজারে ড্রাগন ফল এখন ব্যাপক হারে পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দামি ফল হিসেবে ড্রাগন ফলকে বেছে নিয়ে থাকেন। কিন্তু ড্রাগন ফল যে মানবদেহের জন্য উপকারী ও নানাবিদ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তা আমাদের অনেকেরই অজানা। নিম্নে মানব দেহের জন্য উপকারী ড্রাগন ফলের কিছু অজানা তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলোঃ-
মানবদেহের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল
- ড্রাগন ফলে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন-সি জাতীয় ফলের মধ্যে এই ফলটি বেশ উপকারী যা আমরা অনায়াশেই গ্রহণ করতে পারি।
- ড্রাগন ফলে রয়েছে আন্তর্জাতিক আমিনো অ্যাসিড যা আপনার শরীর বা সু-স্বাস্থ্য গঠনে সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। ড্রাগন ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যারোটিন থাকায় আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। তাই আমরা ড্রাগন ফলকে খাবার হিসেবে বেছে নিতে পারি।
- ড্রাগন ফলে ফাইবার যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে আন্তর্জাতিক ফাইবার রয়েছে যা আপনার শরীরের পাচন প্রক্রিয়াকে যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত করে থাকে। ড্রাগন ফল রক্তের কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। পাশাপাশি ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে আপনার শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি পুরণ হয় দ্রুততম সময়ে।
- নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে হার্ট ভালো থাকে। আমাদের মধ্যে যারা হার্টের রোগী তাদেরকে ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
- আমাদের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ওজন একটি বড় বাঁধা। পরিমিত ওজনের চাইতে মাত্রাতিরিক্ত ওজন কখনোই সুস্থ জীবন বয়ে আনতে পারে না। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি ড্রাগন ফলকে বেছে নিতে পারেন।ড্রাগনের মধ্যে থাকা প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
- গবেষণায় দেখা গেছে ড্রাগন ফল খাওয়ার কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমায়। পৃথিবীতে ক্যান্সার ঝুঁকি কমায় এমন খাদ্য তালিকার মধ্যে ড্রাগন ফল অন্যতম। ড্রাগন ফলে লাইকোপেন এর আধিক্য থাকায় ক্যানসারপ্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে থাকে।
- বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি নীরব ব্যাধি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমে সুস্থ থাকা এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাইতো আমরা ড্রাগন ফল এর অসংখ্য গুনাগুনের মধ্যে একটি ঘুন পাই তা হল আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
- সুস্থ থাকতে গেলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখা উচিত। রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটলে আমরা স্ট্রোকজনিত সমস্যায় মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ি। নিয়মিত ড্রাগন ফল গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা শরীরে রক্ত চলাচল সঠিক রাখতে ও স্ট্রোকজনিত ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতে পারি। আবার ড্রাগন ফলে প্রচুর আঁশ থাকায় রক্তের চর্বি কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
- আমাদের শরীরে নিয়মিত খাদ্যাভাসের কারণে অনেক সময় হজম প্রক্রিয়ায় আঘাত ঘটে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করলেও হজমের সমস্যায় আমাদেরকে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে আপনি ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে আপনার হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী হিসেবে কাজ করবে।
- আমাদের মধ্যে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও আপনি নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
- আমাদের প্রাপ্তবয়স্কদের অনেকে আছেন যারা অল্পতেই বুড়ো হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। বয়স হয়নি কিন্তু আপনার স্কিনে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে। ত্বকের লাবণ্য হারিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে, ড্রাগন ফল হতে পারে আপনার কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই, আপনার বয়স ধরে রাখতে বা শরীরের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এর আধিক্য থাকায় আমাদের হাড় শক্ত করতে ও দাঁত মজবুত রাখতে যথেষ্ট সহায়তা করে।
- অল্প বয়সে চুল পড়ে যাওয়া, অকালপক্কতা আমাদের একটি বড় সমস্যা। পানির ক্ষারের কারণে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে ও প্রচুর পরিমাণে প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সে মাথায় টাক পড়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে, চুল পড়া রোধে ড্রাগন ফল বেশ উপকারী।
আরও পড়ুনঃ নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল যেমন উপকারী ফল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত তেমনি এই ফলটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী মেনে খাওয়া উত্তম। সাধারণত আপনি ড্রাগন ফলকে ফলের মতো কেটে খেতে পারেন। খোসা ফেলে জুস করেও ড্রাগন ফল খাওয়া যায়। আপনি ইচ্ছা করলে সালাদ হিসেবেও ড্রাগন ফল খেতে পারেন। তবে, অতিরিক্ত তাপের কারণে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। তাই ড্রাগন ফল রান্না করে কখনই খাবেন না।
দেশীয় গবেষণায় ড্রাগন ফলের উদ্ভাবন
বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফল বেশ জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফলটি বর্তমানে বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে এবং দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ড্রাগন ফলের ৪টি আলাদা প্রজাতিও উদ্ভাবন করেছে। একসময়ের দুর্লভ ড্রাগন ফলটির দেশীয় ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির দরুন এর দাম কমে এসেছে। দেশীয় প্রজাতির উদ্ভাবনকৃত ড্রাগন ফলগুলো হলো-বাউ ড্রাগন-১, বাউ ড্রাগন-২ ও বাউ ড্রাগন-৩।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মানব দেহের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল নানাবিধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেলাম। ভবিষ্যতে আরো কিছু নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের জন্য এখানেই সমাপ্ত করলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url