পান পাতার অভাবনীয় গুন
সুপ্রাচীন কাল থেকে গ্রামবাংলা ও শহরাঞ্চলের আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের মুখরোচক খাবার হিসেবে পানের প্রচলন দীর্ঘদিনের। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারের আনুষ্ঠানিকতার পরে পানের পরিবেষণ ব্যাপকভাবে সমাদৃত। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে শারীরিক নানা উপকারী হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। তাই আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে পান পাতার অভাবনীয় গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করব।
পোস্টসুচিপত্রঃপান খাওয়া তথা আপ্যায়নের রীতি-রেওয়াজ বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। পান পাতার এই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে বাঙালি জাতি সংস্কৃতিতে একে অন্যের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতঃ এক অনবদ্য ভূমিকা রাখে। তাইতো ইতিহাসের পঠ-পরিক্রমায় বাঙালি জাতির সংস্কৃতির মধ্যে পান খাওয়ার সংস্কৃতি অন্যতম। পান পাতা আমাদের নিশ্বাসকে করে সজীব ও সুরভিত। তাইতো মানুষ ঠোঁট ও জিহবাকে লাল করার জন্য পান খেয়ে থাকে। পান পাতা খাওয়ার প্রচলনের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অন্যতম। শুধুমাত্র স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যই নয়, বাঙালি তার ঐতিহ্যগতভাবে, সামাজিক রীতি-রেওয়াজ এর অংশ হিসেবে পানের ব্যবহার দীর্ঘদিনের।
পান অতি সহজলভ্য মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বহুল আলোচিত। একটু ভালো উচ্চ মানের খাবার খাওয়ার পর অথবা মুখের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রতিনিয়তই পান সেবন করে থাকি। তবে পান সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই তামাকজাত দ্রব্য যেমন জর্দা, খর ও বেশি পরিমাণে চুন খাওয়া থেকে আমাদেরকে সর্বদাই বিরত থাকতে হবে। মুখের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য শুধু বাঙালিই নয়, উপমহাদেশে স্থান ও পাত্রভেদে অনেক অঞ্চলেই এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
পান পাতা সেবনের কারণে মুখশুদ্ধির ক্ষেত্রে উপকারী হলেও এর মধ্যে রয়েছে নানাবিধ গুণ। পান পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর আধিক্য থাকে, যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে, পান পাতা আমাদের শরীরের আদ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে, যার দরুন অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকেও আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। খাদ্য হজমের সমস্যা দূরীকরণেও পান পাতা যথেষ্ট উপাকারি। পান পাতায় রয়েছে অতিমাত্রায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা মুখের ভিতরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাঁত হলুদ হওয়া, এমনকি দাঁতের ক্ষয় থেকে মুক্তি দেয় পান পাতা। খাদ্য গ্রহণের পর পান পাতা চিবিয়ে খেলে তা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী যেমন-দাঁত ব্যথা, মাড়িতে ব্যথা ও ফোলা ভাব এবং মুখের সংক্রমণ থেকে আমাদেরকে অনেকটা মুক্তি দেয়।
গবেষণায় পাওয়া যায়, পান পাতা আমাদের হার্ট, ফুসফুস এর যত্ন নিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আমাদের যাদের হাঁপানি জাতীয় রোগ রয়েছে সে সকল ব্যক্তিকে মাঝে মধ্যে পান পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখতেও পান পাতা সেবন যথেষ্ট উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রেও পান পাতা খাওয়ার ওপর ভরসা রাখা যেতে পারে। চলুন জেনে নেই পান পাতার নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে:-
উপকারিতাঃ
পান পাতার নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে নিম্নোক্ত আইটেমগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বাঙালির আবাল বৃদ্ধ বনিতার মুখরোচক হিসেবে পছন্দনীয় খাদ্য তালিকার মধ্যে পান পাতার যে এত জনপ্রিয়তা ও অভাবনীয় গুন সে সম্পর্কে বিস্তর ধারণা লাভ করলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
- প্রথমত, আপনি যদি নিয়মিত পান পাতা খান তাহলে আপনার মুখের স্বাদ বৃদ্ধিতে যথেষ্ট উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।
- আপনার যদি রক্তচাপ থেকে থাকে, পান পাতা খেলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
- পান পাতা আপনার শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট কার্যকরী। পান পাতা খাওয়ার দরুন আপনার মুখের অভ্যন্তরে যে লালার উদ্ভব হয় তা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে পান পাতা খেলে পেটও পরিষ্কার হয়ে থাকে।
- আপনার যদি ঠাণ্ডা জনিত সর্দি বা কাশির হয় এক্ষেত্রে পানের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। পানের সাথে গোলমরিচ, লবঙ্গ মিশিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।
- নিয়মিত পান পাতা খেলে আপনার শব্দচয়ন পরিষ্কার হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনার যদি গলার সমস্যা থেকে থাকে পান পাতা খাওয়ার ফলে এক্ষেত্রে অনেকটা উপকার পেতে পারেন। আপনার মুখের ঘা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও পান পাতা খাওয়ার দরুন যথেষ্ট উপকার পেতে পারেনচিবিয়ে খেয়ে বার বার পিক ফেললে সুফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ পানিবাহিত রোগ মনে রাখার উপায়
অপকারিতাঃ
পান পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই আমাদেরকে পান পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে এর অপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয়ে ধারণা রাখা উচিত। নিম্নে পান পাতার কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো।
- প্রথমত, পান পাতা একটি মুখরচক খাদ্য যা খালি পেটে খাওয়া ঠিক নয়। ভরা পেটে খাওয়ার পরে আমাদের পান খাওয়া উচিৎ, এতে করে খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়।
- পান পাতার সঙ্গে জর্দা মিশিয়ে খেলে পানের সব গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পানের সঙ্গে খয়ের খাওয়া যাবে না। খয়ের খেলে ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- পান পাতা আমাদের শরীরের রক্তে থাকা শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক। রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
- পান পাতা খেলে আমাদের শরীরে অ্যাজমা রোগ হাওয়া ঝুঁকি কম থাকে।
- পান পাতা খাওয়ার সময় চুন পরিহার করুন। নিয়মিত চুন সেবনের কারণে আপনার শরীরে পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে পাথরের আবির্ভাব দেখা দিতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বাঙালির আবাল বৃদ্ধ বনিতার মুখরোচক হিসেবে পছন্দনীয় খাদ্য তালিকার মধ্যে পান পাতার যে এত জনপ্রিয়তা ও অভাবনীয় গুন সে সম্পর্কে বিস্তর ধারণা লাভ করলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url