আদিত্য এল-১ মহাকাশযান
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণের পর এবার সূর্যের রহস্যভেদে পাড়ি দিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এর মহাকাশযান আদিত্য এল-১। ইতোমধ্যেই মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন কর্তৃক সোলার মিশন আদিত্য এল-১ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অনুধাবন করব।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) গতবছর ২০২৩ সালের ২৮ অগস্ট এমনটি জানিয়েছিল যে, ইতোমধ্যে তাদের সোলার মিশন সূর্যপৃষ্ঠে যাত্রা শুরু করেছে। মহাকাশযানটির নাম আদিত্য এল-১। শ্রীহরিকোটার স্পেস পোর্ট থেকেই সূর্যে অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে আদিত্য এল-১ মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হতে পারে এমনটি জানিয়েছিল ইসরো।
আরও পড়ুনঃ খালি চোখে রাত্রিতে দেখা মিলল শনি গ্রহ !
এই প্রথমবারের মতো সূর্যের পর্যবেক্ষণের জন্য স্পেস অবজারেভেটরি পাঠাচ্ছে ভারত। ভারতের ইসরো এই মহাকাশযানটি এমন ডিজাইনে প্রস্তুত করেছে যে, যার মাধ্যমে সোলার করোনার প্রতিটি অংশ খুবই সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। এছাড়া, সোলার অ্যাটমোস্ফিয়ার বা সূর্যের আবহাওয়া-পরিবেশ খুবই সহজভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম এই আদিত্য এল-১ মহাকাশযানটি।
সৌর বায়ু অর্থাৎ সোলার উইন্ড বিশ্লেষণ করাও ইসরোর সোলার মিশনের উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য। এই সোলার উইন্ডটি পৃথিবীতে প্রায়শই সমস্যা তৈরি করে। পৃথিবীতে মানুষের নিকট সোলার উইন্ডটি অরোরা নামে সুপরিচিত।
সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম 'এক্স' এর মাধ্যমে ইসরো কর্তৃক প্রকাশ করা হয় যে, গত বছর ২০২৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর নাগাদ ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে শ্রীহরিকোটা থেকে আদিত্য এল-১ মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হবে। যে কোন ব্যক্তি এই মহাকাশযনটির লঞ্চ ইভেন্টটি উপভোগ করতে পারেন যার জন্য আপনাকে একটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কোথায় রেজিস্ট্রেশন করবেন, তা 'এক্স' এর একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে ইসরো।
আরও পড়ুনঃ বজ্রপাতের কারণ ও বাঁচার উপায় জানুন!!!
জানা যায়, আদিত্য এল-১ অভিযানে এল-১- এর চারপাশে থাকা কক্ষপথ থেকে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে মহাকাশযানটি। ইসরো কর্তৃক নির্মিত এই মহাকাশযানটির আছে সাতটি পেলোড। যার সহায়তায় পর্যবেক্ষণ করা হবে ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সূর্যের একদম বাইরের লেয়ার বা আস্তরণগুলি। একেই বলা হয়ে থাকে করোনা, যা বিভিন্ন প্রকার ওয়েভ ব্যান্ডে সজ্জিত অর্থাৎ আচ্ছাদিত রয়েছে।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এই প্রথম নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পরে পাড়ি দিল সৌরপৃষ্ঠে। সম্প্রতি ইসরো জানিয়েছে, ইতোমধ্যে আদিত্য এল-১ মহাকাশযানটি ১১০ দিনের যাত্রা শেষ করে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের এক কক্ষপথ ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট বা ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে ল্যান্ড করে। গত ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ভারতীয় সময় বিকাল আনুমানিক ৪টায় সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে সৌরযানটিকে বসিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ইসরো জানায়, স্যাটেলাইট আদিত্য এল-১ মহাকাশযান সূর্যের বাইরের সবচেয়ে উত্তপ্ত স্তর করোনার যাবতীয় তথ্যাদি তুলে আনতে সক্ষম। গত শনিবার ৬ জানুয়ারি ভারতীয় সময় বিকেলে আদিত্য-এল ১ এর চূড়ান্ত পর্যায়ের কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হয়। সূর্য এবং পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তার মাত্র এক শতাংশ অগ্রসর হয়েছে আদিত্য-এল১। এযাবৎ ভারতের কোনও মহাকাশযান সূর্যের নিকটবর্তী হতে দেখা যায়নি।
সূর্যের সবচাইতে রহস্যে ভরা স্তর হল সোলার করোনা। সূর্যের বাহিরের স্তরের তাপমাত্রা আনুমানিক ১ কোটি কেলভিন। আর নিম্নস্তরের তাপমাত্রা আনুমানিক ৬০০০ কেলভিন। আদিত্য এল-১ সোলার যানটি সূর্যের পৃষ্ঠের করোনার তাপমাত্রার পার্থক্য ও করোনা হতে ঝলসে পড়া আগুনের রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কিরূপ প্রভাব ফেলে সেটাই খুঁজে বের করবে। আর এর জন্য উপগ্রহটিতে থাকছে সাতটি সায়েন্স পে-লোড।
আরও পড়ুনঃ অটো-জিপিটি কি ? তা জানুন!!!
ইসরো ইতোমধ্যে জানায়, সূর্যের করোনার তাপমাত্রা গড়ে দশ লাখ বা তার কিছু বেশি ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের তাপমাত্রা সময় সময় বাড়ে, আবার কোন সময় কমতে থাকে। যার কারণ উৎঘাটন করবে আদিত্য এল-১। সৌরবায়ুর গতি-প্রকৃতি বোঝাতে সক্ষম হবে এই উপগ্রহ। প্রোটন ও ইলেকট্রনের সঙ্কমিস্রনে এই সৌরবায়ু সূর্যের প্লাজমা থেকে প্রবল বেগে ছিটকে বেরিয়ে আসে। যার গতি সেকেন্ডে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার এবং তাপমাত্রা প্রায় ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের উত্তপ্ত সোলার করোনার কারণেই এই সৌরবায়ুর উৎপত্তি। এই সৌরবায়ুর মধ্যে থাকা শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ও আয়নগুলোর কারণে স্যাটেলাইটগুলো আক্রান্ত হয়, যার কারণে পৃথিবীর টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও জিপিএস নেটওয়ার্ক নষ্ট হওয়ার আসঙ্খা দেখা দিতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার খেত্রেও সৌরবায়ু ও সৌরঝড় অনেকাঙ্কশে দায়ী বলে ধারণা করা যেতে পারে। এই সৌরঝড় কখন, কিভাবে, কোন পথে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে তার সঠিক খোঁজ অনুসন্ধান করবে আদিত্য এল-১ মহাকাশযান। অন্যদিকে সূর্য হতে নির্গত অতি-বেগুনি রশ্মি আমাদের জলবায়ুর জন্য কতটা ক্ষতিকর সেই বিষয়টিও উৎভাবিত হবে মহাকাশযানটির সফল অবতরণের মাধ্যমে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এর উৎক্ষেপনকৃত আদিত্য এল-১ মহাকাশযান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেলাম। আজকের আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url