নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা
সুদূর প্রাচীন কাল থেকে নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে সব ধরণের বয়সের মানুষের মধ্যে তেল অথবা তেল জাতীয় প্রসাধনী ব্যবহারের প্রচলন দীর্ঘ দিনের। আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে, নাভির মধ্যে নিয়মিত তেল ব্যবহারে শরীরের জন্য বেশ উপকারী ফল পাওয়া যায়প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই কনটেন্টির মাধ্যমে আমাদের শরীরে নাজুক অঙ্গ নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি, মানব দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে নাভি একটি। নাভি আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ, যার সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে ভেষজ বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে নাভি-কে কেন্দ্র করে ন্যাভেল থেরাপি থেকে শুরু করে নানাবিধ চিকিৎসা প্রদান করা হতো। আবার শরীরের বিভিন্ন প্রকার রোগ সারাতেও আদিকাল থেকে ন্যাভেল থেরাপি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এই ন্যাভেল থেরাপির প্রধান উপাদান হিসেবে তেল বা তেল জাতীয় প্রসাধনীর ব্যবহার ও প্রচলন ছিল অতিমাত্রায় ও বহুল প্রচারিত। অনেকেই এটিকে নাভি চিকিৎসা ও নাভি পুরাণ বলে থাকেন। এই চিকিৎসার মূল রহস্য হচ্ছে, নাভিতে তেল দিলে তা পেকোটি গ্ল্যান্ডের মাধ্যমে সহজেই শোষিত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। একবিংশ শতাব্দীতেও এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলন না থাকলেও অনেকক্ষেত্রে এর প্রয়োগ এখনও দেখতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা
জানা যায়, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ইন্ডিয়াতে তেল মেসেজের প্রচলন বহুকাল আগে থেকেই চলে এসেছে। লেখক সাহারা রোজ এর ইডিয়টস গাইড টু আয়ুর্বেদ বই থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়। আবার ভবপ্রকাশা নামক আয়ুর্বেদশাস্ত্রের একটি বইতে এমন এক চর্চার কথা বলা হয়, যেখানে নাভির চারপাশে আমলকী ফলের পেস্ট দিয়ে তন্মধ্যে আদার রসে পরিপূর্ণ করা হয়। আয়ুর্বেদ বিশ্বাসীরা নাভিকে শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস ‘মহামণি’ মনে করে থাকেন। এক কথায়, নাভিতে তেল মেসেজের দরুন আপনার শারীরিক কিংবা মানসিক এমনকি ত্বকের সুরক্ষায়ও ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে সহায়তা করে। তাইতো বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমারা অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য-রুটিনে নাভিতে তেল মেসেজ প্রাচীন এই পদ্ধতিটি যুক্ত করে থাকেন।
নাভিতে তেল মেসেজের কিছু উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত প্রত্যহ নাভিতে তেল মেসেজ এর কারণে আমাদের শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে থাকে। আমরা নিজেকে সুস্থ ও ফিট রাখতে এবং শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এমনকি ত্বক সুন্দর রাখতে কতই না প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকি। আমাদের সুস্বাস্থ্যের মূল কেন্দ্রস্থল হল পরিপাকতন্ত্র। তাই যেকোনো ব্যক্তির ত্বকের উজ্জ্বলতা নির্ভর করে তার পরিপাকতন্ত্রের ভালো থাকার উপর। অর্থাৎ, পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ে চিন্তা করলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর ধারণা পাওয়া যেতে পারে। খাবার থেকে পুষ্টি শোষণপ্রক্রিয়ার প্রায় পুরোটাই পরিপাকতন্ত্র থেকে হয়ে থাকে। আমরা জানি একটি সুস্থ-সবল পরিপাকতন্ত্রে থাকে ভালো ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট যেগুলো খাবারকে হজমে ও ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নানান কারণে পরিপাকতন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। যেমন- ব্যাকটেরিয়াল অর্থাৎ প্যারাসাইটিক ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়া অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি (ডিবায়োসিস), খাবারের সংবেদনশীলতার কারণে হওয়া ইনফ্ল্যামেশন এর দরুন পরিপাকতন্ত্রে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, গ্যাস্ট্রিক, ইরিটেবল ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হজমজনিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পেটের সু-স্বাস্থ্যের সহিত ত্বকের একটি যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত যেসকল পুরুষ অথবা মহিলারা হজমজনিত সমস্যায় পড়েন, অনেক সময় দেখা যায় ঔষধ খেয়েও এ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না এবং এমন প্রকৃতির রোগ সারাতে গেলে ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয় তাদের ক্ষেত্রে হজমজনিত সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে নাভিতে তেল ম্যাসাজ করা যেতে পারে। নিয়মিত নাভিতে খাঁটি সরিষার তেলের মালিশ, যকৃৎ এবং প্লীহা থেকে গ্যাস্ট্রিক ও পিত্তরস বের হতে সাহায্য করে। এছাড়া বমি বমি ভাব বা অন্ত্রের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নাভিতে পেপারমিন্ট বা আদার তেল লাগিয়েও ভালো ফল পেতে পারেন।
ত্বকের পুষ্টি জোগাতে
ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কে না চায়। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে দৈনিক নিয়ম করে নাভিতে তেল ম্যাসাজ খুবই উপকারী। তবে আপনি যদি ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ভালো ফল পেতে পারেন। পক্ষান্তরে, নাভিতে তেল মেসেজ করলে সময় বেশি লাগলেও দীর্ঘস্থায়ী উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের পুষ্টি যোগাতে ত্বকের যত্নে আপনি বিভিন্ন প্রকার অলিভ অয়েল তেল, নারিকেল অথবা আমন্ড তেল ব্যবহার করতে পারেন। এ জাতীয় তেল ত্বকের সংক্রমণসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করে ময়েশ্চার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতকাল কখন শুরু হয় - শীতকাল ২০২৩
ন্যাভেল থেরাপির দ্বারা নাভি থেকে ত্বকের সর্বস্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি ছড়িয়ে যায়। যার ফলে আমাদের শরীরের ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হতে সহায়তা করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের সারা বছর ঠোট ও হাত-পা না ফাটলেও শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় তা ফেটে যেতে থাকে। নাভিতে নিয়মিত তেল মেসেজ করলে শরীরের শুষ্কতা কমার পাশাপাশি ঠোঁটের কালো ছাপগুলি এমনকি চোখের নিচে কালো দাগ অর্থাৎ ডার্ক সার্কেল কমাতেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
চুলের সমস্যা রোধে
নাভিতে তেল মেসেজ ত্বকের উজ্জ্বলতা শ্রী বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলের সমস্যা রোদে ব্যাপক উপকারী। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, আমাদের দেহের শিরার সঙ্গে নাভির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে অর্থাৎ নাভির সাথে মানবদেহের ৭২ হাজার শিরার সংযোগ রয়েছে। নাভি দিয়ে তেল মেসেজের দরুন আপনার চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ শরীরে শোষণ করতে সহায়তা করে। আপনার কালো চুল অকালে পেকে যাওয়ার জন্য দায়ী শিরাগুলোতে পুষ্টি গেলে অসময়ে চুল পাকা বন্ধ হওয়াসহ চুলের গোড়া মজবুত হবে। চুল পড়া রোধ করতে নারকেল তেল হলো সবচাইতে উপকারী তেল। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন ই, সি, বি, কপার ও জিংক। আপনি চাইলে স্ক্যাল্প জাতীয় সমস্যা ও চুলের শুষ্কতা দূর করতে নাভিতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে অর্থাৎ কি করলে আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের সমস্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url