বিশ্বায়নে এল নিনো সংকট কি? তা জানুন!!!
পৃথিবীর বয়স যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার সাথে সাথে বৈশ্বিক জলবায়ু ক্রমশই পরিবর্তন হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে বিশ্বায়নে তৈরি হচ্ছে জলবায়ু সংকট। এল নিনো নামক এক ধরনের প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভাবিত জলবায়ু সংকট এর দরুন বিশ্ব পরিমন্ডলে খাদ্য, পানীয় ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এমনটিই সতর্ক করেছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। তাই, আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিশ্বায়নে এল নিনো সংকট কি? জলবায়ুতে এর প্রভাব, উৎপত্তি ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বিশ্বায়নে এল নিনো সংকট সম্পর্কে নিম্নোক্ত সূচিপত্র থেকে সহজেই জেনে নিনঃ
বিশ্বায়নে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে এল নিনো সংকটের দরুন প্রাকৃতিক জলবায়ুগত সমস্যাগুলো অতিমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে বলে এমনটিই ধারণা করছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা৷ বৈশ্বিক জলবায়ুতে এল নিনো এর ফলে খরা, ক্ষুধার পাশাপাশি প্রাণীবাহিত রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন অত্যাধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আবহাওয়াভিত্তিক অধিদপ্তরের ধারণা মতে, আনুমানিক ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এল নিনো আবহাওয়ার প্রাদুর্ভাগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এমন উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে পৃথিবী সবচাইতে উষ্ণতম বছর হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে৷ জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন যে, এল নিনো এর ফলে ধান কাটার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ এশিয়ার অনেক দেশ ইতিমধ্যেই তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসল মজুদ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ এল নিনো'র দরুন প্রায় সময় দক্ষিণ এশিয়ায় বিপজ্জনক তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয় এবংমানুষ প্রচন্ড পরিমাণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নিপাচিত হয়। এল নিনোর বছরগুলিতে তাপের আকস্মিক পরিবর্তন সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে৷
আরও পড়ুনঃ পুষ্টিগুনে '''চিয়া সিড''' !!!
জলবায়ু প্রভাব ও অভিযোজনের প্রধান মেডেলিন থমসন জানান- পূর্ববর্তী এল নিনোর বছরগুলিতে এই ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে৷ কেনিয়ার মতো দেশে ১৯৯৭-৯৯ সাল নাগাদ এল নিনো এর সময় মশার প্রজনন বৃদ্ধি ব্যাপক হারে ছিল৷ তিনি আরও জানান যে, ২০১৫-১৬ সালের শেষের দিকে এল নিনোর প্রভাবে প্রায় একই চিত্র দেখা যায়৷
জলবায়ু বিজ্ঞানী ওয়াল্টার ব্যাথগেন এর ধারণা মতে- এল নিনো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে৷ খরা, খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির মতো সম্ভাব্য প্রভাবের ক্ষেত্রে আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জলবায়ু বিজ্ঞানীদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ৷
ডব্লিউএমও-এর জলবায়ু পরিষেবার প্রধান ক্রিস হিউইট বলেন- এল নিনোর প্রভাবে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অত্যধিক বেশি৷ তিনি মনে করেন, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ আমাদের পূর্বাভাস দিচ্ছে যে, প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাওয়ার ৬৬% সম্ভাবনা রয়েছে ৷
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান গ্রেগরি ওয়েলেনিয়াস বলেন- গত বছর ইউরোপে তাপজনিত কারণে আনুমানিক ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোনও মারাত্মক আবহাওয়ার তুলনায় তাপপ্রবাহে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ হঠাৎ উষ্ণ আবহাওয়া মানবদেহকে যেমন প্রভাবিত করে আবার অন্যদিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে তাপপ্রবাহের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাও তীব্রতর হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে তাপের কারণে তৈরি সবচেয়ে সাধারণ নেতিবাচক স্বাস্থ্য প্রভাব হলো ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো ভেক্টর বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব৷ চলুন, আমরা এল নিনো কি? কি তার পরিচয়? এল নিনো এর প্রভাব ও উৎপত্তিস্থল ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
এল নিনো কি ?
এল নিনো একটি স্প্যানিশ শব্দ। এটি সাধারণত উত্তর আমেরিকায় ক্রিসমাসের সময় বেশি দেখা যায়। এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে অতপ্রতভাবে সম্পর্কযুক্ত।
এল নিনো উৎপত্তির কারণ
এল নিনো এর কারণে দক্ষিণ আমেরিকায় যেমন বৃষ্টি নিয়ে আসে, তেমনি এটি ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রচন্ড খরা নিয়ে আসে। এই খরা অঞ্চলগুলোর জল সরবরাহকে হুমকির মধ্যে ফেলে, জলাধারগুলি শুকিয়ে যায় ও নদীগুলি কম জল বহন করে থাকে৷ কৃষিকাজে সেচের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই হুমকির মধ্যে পড়েছে।
এল নিনো এর প্রভাব
এল নিনোর উল্লম্ব বায়ুর প্রভাব আটলান্টিকে হারিকেনের কার্যকলাপ হ্রাসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত শরৎ, শীত ও বসন্তকালের সময় অনেক দেশেই গড় বৃষ্টিপাতের কারণে দাবানলের ঝুঁকি হ্রাস করে। কিন্তু বন্যার ঝুঁকি বেশি থাকে বলে ধারণা করা হয়। এল নিনোর উষ্ণতম বায়ুর প্রাদুর্ভাবের সময় বাতাস অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। দক্ষিণ আমেরিকার জেলে সম্প্রদায়রা প্রথম ১৬০০-এর দশকে প্রশান্ত মহাসাগরে অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ জলের সময়কাল হিসেবে লক্ষ্য করেছিলেন। এল নিনো সাধারণত দুর্বল বর্ষা ও গড় বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ, এল নিনোর বছরে মারাত্মক খরা এবং খরার মতো পরিস্থিতি সবসময়ই দেখা দেয়।
(ক) জলবায়ুতে এল নিনোর প্রভাব: এল নিনোর কারণে শীত মৌসুমে উষ্ণ আবহাওয়া এবং গ্রীষ্মকালে শুষ্ক, অপর্যাপ্ত বর্ষা হয়। এটি কৃষি ক্ষেত্রকে আরও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে, অর্থাৎ খরার মতো পরিস্থিতির কারণে ফসলাদির ক্ষতি হতে পারে।
(খ) কৃষিতে এল নিনোর প্রভাব
এল নিনোর কারণে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি, পর্যাপ্ত পানির ঘাটতি, খাদ্য খরচ বৃদ্ধি ও ফলন হ্রাস পেতে পারে, যার দরুন কৃষকের আয় হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নিউক্লিয়াসকে কোষের প্রাণকেন্দ্র বলা হয় কেন
এল নিনো দেখা যায় কোথায়
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম এল নিনো।
এল নিনো কি কি ঘটাতে পারে
এল নিনোর উষ্ণ জলস্রোত ঠান্ডা পুষ্টিসমৃদ্ধ হাবল্ট জলস্রোতের সাথে অদল-বদল হয়ে থাকে। যখন এল নিনোর এমন অবস্থা মহাসাগরে কয়েক মাস অন্তর বিরাজ করে, তখন অত্যধিক গরম সামুদ্রিক জলরাশি দেখা যায়। যার ফলে স্থানীয় মাছ ধরার ব্যবসার উপর এটি প্রভাবান্বিত করে।
এল নিনোর প্রভাবে কোথায় বৃষ্টি হয়
পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে্র দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর এ কোন কোন বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী বৃষ্টি সৃষ্টি হয়। এরই নাম এল নিনো।
আরও পড়ুনঃ পানিবাহিত রোগ মনে রাখার উপায়
এল নিনো কোন মাসে দেখা যায়
এল নিনো স্প্যানিশ শব্দ। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে পেরু, ইকুয়েডর বরাবর কোনও কোনও বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ এক প্রকার উষ্ণ দক্ষিণমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। এরই নাম এল নিনো।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিশ্বায়নে এল নিনো সংকট কি? কি তার পরিচয়? এল নিনোর প্রভাব, উৎপত্তির কারণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা পেলাম। আজকের কনটেন্টটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url