বজ্রপাতের কারণ ও বাঁচার উপায় জানুন
বাংলাদেশ একটি ষড়ঋতুর দেশ। প্রাকৃতিক নিয়মে এদেশের ঋতু পরিবর্তন হয়। ঋতু পরিবর্তনের মধ্যেই বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঁড় এই তিন মাস সম্ভাব্য বজ্রপাতের মাস হিসেবে সুপরিচিত। তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রত্যেক বছরে প্রায় শতাধিক মানুষ বজ্রপাতের আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্যানুযায়ী, বজ্রপাতের হটস্পট দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বজ্রপাতের কারণ ও বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানবো।
বজ্রপাত প্রকৃতিতে এক আতঙ্কের নাম। ছবি: সংগৃহীত প্রতিকী ছবি
পোস্টসুচিপত্রঃবাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ একটি দেশ। প্রায় প্রতি বছরই এই দেশে কোন না কোন ভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। জনমনে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিভিন্নভাবে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সিলেট হচ্ছে অন্যতম বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। আমরা সাধারণত দেখি বজ্রপাত এপ্রিল-মে মাসে অর্থাৎ বাংলা বৈশাখ মাসে বেশি দেখা যায়। চলুন আমরা জেনে নেই বজ্রপাতের প্রকারভেদ, বজ্রপাত সৃষ্টির নানাবিদ কারণ ও বাঁচার উপায় সম্পর্কে।
বজ্রপাতের প্রকারভেদ
বজ্রপাত সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
- ক্লাউড লাইটেনিং,
- ক্লাউড টু লাইটেনিং এবং
- ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটেনিং।
নিম্নে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করা হলো।
ক্লাউড লাইটেনিং
মেঘ যখন নিজেদের মধ্যে চার্জ আদান-প্রদান করে, তখন যে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয় তাই ক্লাউড লাইটেনিং। আর এমন প্রকৃতির বজ্রপাত খুবই সামান্য পরিমাণে ভোল্টেজ তৈরি করে থাকে এবং শব্দ করে না।
ক্লাউড টু লাইটেনিং
ক্লাউড টু লাইটেনিং বজ্রপাত বলতে এমন প্রকৃতির বজ্রপাত বুঝায়, যে বজ্রপাতের উপরে বড় মেঘ এবং নিচে থাকে ছোট মেঘ। যার দরুন বড় মেঘ ছোট মেঘের উপর নিচের চার্জকে ডিসচার্জ করে দেয়। এ জাতীয় বজ্রপাতে শব্দ ও আলো উভয়ই সৃষ্টি হয়।
ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটেনিং
ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটেনিং ধরনের বজ্রপাতে মেঘের নিচের দিকে ভারী নেগেটিভ চার্জ জমতে থাকে। মেঘের মধ্যে এমন প্রকৃতির চার্জ এর পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একসময় বড় আকার ধারণ করে। মেঘ একটি শক্তিশালী ধারকে পরিণত হয়ে থাকে। ধারক চার্জ সঞ্চয় করে রাখে। এই সময় বিপরীতধর্মী চার্জ অর্থাৎ পজিটিভ চার্জ ভূপৃষ্ঠে তৈরি হয়।
বজ্রপাত সৃষ্টির কারণ
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা যখন ক্রমশই ঊর্ধ্ব আকাশে উঠতে থাকে, তখন তার আগে থেকেই উপরে অবস্থিত মেঘের নিচের দিকের ঘনীভূত বৃষ্টির সঙ্গে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা বাষ্পের পরমাণু অনেকখানি ইলেকট্রন হারায়। আর যে পরিমাণ পরমাণু ইলেকট্রন হারায় সেই পরিমাণ পরমাণু পজিটিভ চার্জ অর্জন করে। যে পরিমাণ পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে, সেই পরিমাণ পরমাণু নেগেটিভ চার্জ অর্জন করে। যেমন উদাহরণ হিসেবে চিরুনি ও কাগজের পরীক্ষাকে দেখানো যেতে পারে। ফলস্রুতিতে মেঘে স্থির চার্জ তৈরি হয়। চার্জ যদি স্থির থাকে তাহলে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হয়। স্থির বিদ্যুৎ চার্জ বহনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার মাধ্যম পাওয়া যায় না। তাই নেগেটিভ ও পজিটিভ চার্জ মিলিত হয়ে ডিসচার্জ হতে চেষ্টা করে। ফলে চার্জ মিলিত হওয়ার ধরুন বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়
বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি দেখা দেয়। বজ্রপাতের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও এ থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি। পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই কোথাও না কোথাও বজ্রপাত হয়ে থাকে। তাই, ঝড়-বৃষ্টিতে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি।
- বজ্রপাতকালীন ঘরের বাহিরে থাকা অবস্থায় কখনো ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াবেন না। কোনো গাছের নিচেও আশ্রয় নিবেন না কারণ গাছের উপর বজ্রপাত বেশি হয়। বড় বিল্ডিং ও টাওয়ারের উপরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বেশি করে তালগাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। ঝড়বৃষ্টি হলে প্রয়োজনে পাকা বাড়িতে অথবা ঘরের অভ্যন্তরে থাকুন। কারণ পাকা বাড়ির নির্মাণ সামগ্রীতে লোহার ব্যবহার রয়েছে। লোহা বিদ্যুৎ পরিবাহী। অর্থাৎ পাকা বাড়িতে বজ্রপাত হলে মেঘ থেকে ইলেকট্রন লোহার রডের ভেতর দিয়ে মাটিতে চলে যায়।
- ঝড়-বৃষ্টি হলে খাল-বিল, নদী-নালা ও পুকুরের পানির নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী।
- বজ্রপাতের সময় মোটরসাইকেল অথবা সাইকেল চালানো অবস্থায় থাকলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন।
- বজ্রপাতের শব্দ শোনার আগে তা মাটিতে স্পর্শ করে। কারণ আলোর বেগ শব্দের বেগের চেয়ে বেশি হয় বিদায় বজ্রপাত হওয়ার পরে শব্দ শোনা যায়।
- ঝড় বৃষ্টির সময় বজ্রপাত দেখা দিলে বাড়ির ভেতরের দরজা-জানালা তাৎক্ষণিক বন্ধ রাখুন।
- অতিমাত্রায় বজ্রপাত দেখা দিলে আপনার গৃহে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ইলেকট্রনিক সামগ্রীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
- বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার গৃহে যদি তারযুক্ত ফোন থাকে তাহলে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। কারণ তারযুক্ত ল্যান্ডফোন খুবই বিপজ্জনক। এর দ্বারা বজ্রপাতের আঘাতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বজ্রপাতের সময় চলন্ত গাড়িতে থাকলে দ্রুত দরজা-জানালা বন্ধ করুন। কারণ গাড়ির ধাতব পদার্থগুলো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফলে গাড়িতে বজ্রপাত হলে গাড়ির ধাতব পদার্থের মধ্য দিয়ে মেঘ থেকে আসা ইলেকট্রনগুলো মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ বজ্রপাতের সময় গাড়িতে থাকাকালীন গাড়ির ধাতব পদার্থগুলো স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে গাড়িটি নিয়ে সম্ভব হলে কোনো বিল্ডিং এর নিচে আশ্রয় নিন।
- বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতল ওয়ালা ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
- বজ্রপাতে যদি কেহ আহত হন তবে বৈদ্যুতিক শকে আহত ব্যক্তির ন্যায় চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ও আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url