গাড়ির নম্বর প্লেট সম্পর্কে জানুন
সাধারণত গাড়ির নম্বর প্লেটেই রয়েছে গাড়ির সকল তথ্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক ইস্যুকৃত এই নম্বর প্লেট এর মধ্যে আপনার পরিচয় ও গাড়ি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষিত থাকে। গাড়ি সম্পর্কিত কোন প্রকার তথ্যাদির প্রয়োজন হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিমিষেই তা বিআরটিএ এর ইস্যুকৃত নম্বর প্লেট থেকে জেনে নিতে পারে। আপনার হারিয়ে যাওয়া গাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নম্বর প্লেট থেকে তা সহজেই ই বের করা সম্ভব হয়। প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই কনটেন্টের মাধ্যমে আপনাকে গাড়ির নম্বর প্লেট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করার চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আপনার গাড়ির নম্বরপ্লেটে থাকা শব্দ ও সংখ্যার পাশাপাশি প্লেটের রং-এর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আমরা সাধারণত দেখি সড়কে চলাচলকারী গাড়ির নম্বরপ্লেট সাদা রঙের হয়ে থাকে।কিন্তু সাদা রংয়ের বাইরেও একাধিক রঙের প্লেট রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে সাধারণত আট ধরনের নম্বরপ্লেট এর প্রচলন রয়েছে যেমন- হলুদ-সাদা, হলুদ, কালো, সবুজ, লাল, নীল, উপরের দিকে তীর চিহ্ন করা প্লেট, দেশের জাতীয় প্রতীকসহ লাল রঙের নম্বরপ্লেট।
আরও পড়ুনঃ এসি বিস্ফোরণ প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরী!!!
নম্বর প্লেট এর প্রকৃতি ও ধরন
সাদা রঙের নম্বর প্লেট
সাদা রংয়ের নম্বর প্লেটটি সাধারণ ক্ষেত্রে তেলবাহী ও ইঞ্জিন চালিত ব্যক্তিগত অথবা কমার্শিয়াল প্রকৃতির গাড়িতে ব্যবহৃত হয়। এ জাতীয় নম্বর প্লেটটি সাদা রংয়ের নম্বর প্লেটে কালো রঙের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এমন প্রকৃতির নম্বর প্লেট সড়কে চলাচল করতে বেশি দেখা যায়।
সবুজ রঙের নম্বর প্লেট
ইলেকট্রিক যানবাহন অর্থাৎ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সবুজ রঙের নম্বরপ্লেটে সাদা রঙের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তাই এ ধরনের নম্বরপ্লেট দেখলেই বুঝতে হবে গাড়িটি ব্যাটারি চালিত। তবে ব্যাটারি চালিত প্রাইভেট ও কমার্শিয়াল গাড়ির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। প্রাইভেট ব্যাটারি চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন সাদা ফন্ট দিয়ে শুরু হয় আর কমার্শিয়াল গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন নম্বর শুরু হয় হলুদ ফন্ট দিয়ে।
তিরচিহ্ন করা নম্বর প্লেট
সাধারণত সামরিক গাড়ির ক্ষেত্রে এমন প্রকৃতির নম্বরপ্লেট ব্যবহার হয়ে থাকে। এ জাতীয় নম্বরপ্লেটের শব্দ অথবা সংখ্যা শুরুর পূর্বে অর্থাৎ দ্বিতীয় সংখ্যার পর একটি উপরের দিকে তির চিহ্ন দেয়া থাকে।
জাতীয় প্রতীকসহ লাল রঙের নম্বর প্লেট
এমন প্রকৃতির নম্বরপ্লেট সাধারণত সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানরা ব্যবহার করে থাকেন।
হলুদ রঙের নম্বর প্লেট
সাধারণত একটি দেশে নিয়োজিত বিদেশি কূটনৈতিকদের গাড়ির নম্বরপ্লেট হলুদ রঙের হয়ে থাকে। আবার তাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরও আলাদা হয়। প্রতিটি গাড়ির নম্বর প্লেট দেখতে এক রকম হলেও নম্বরের ক্ষেত্রে তার ভিন্নতা রয়েছে।
নম্বর প্লেট লেখার ফরম্যাট
বাংলাদেশে বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহনে নম্বর প্লেট সিস্টেম চালু হয় ১৯৭৩ সালে। ক্যাটাগরি অনুসারে গাড়ির নম্বর নির্ধারণ করতে বিআরটিএ’র একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট রয়েছে। যে কোন গাড়ির পেছনে অথবা সামনে নানা ধরনের নম্বর প্লেট থাকে। যানবাহনগুলোর নম্বর প্লেটের ফরম্যাট হচ্ছে- এলাকার নাম, গাড়ির ক্যাটাগরি ক্রম এবং গাড়ির নম্বর।
যেমন- ঢাকা মেট্রো ক ১১-১২১২, ঢাকা মেট্রো খ ৩১-২২৪৫ ইত্যাদি। এখানে- ঢাকা মেট্রো বলতে যে গাড়িটি ঢাকা মেট্রোপলিটনের আওতাধীন তা সহজেই অনুমান করা যায়। ‘ক’ হচ্ছে শুধুমাত্র ৮০০ সিসির প্রাইভেটকার গাড়ির চিহ্নকারী বর্ণ। অর্থাৎ এ জাতীয় সব গাড়ি ‘ক’ বর্ণ দ্বারা চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী ‘১১’ হচ্ছে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এবং ‘১২১২’ হচ্ছে গাড়ির সিরিয়াল নাম্বার।
আরও পড়ুনঃ গাড়ির এসির ঠাণ্ডা বাড়ানোর সহজ টিপস!!!
কোন বর্ণ দ্বারা কী বুঝায়
বর্ণগুলোর অর্থ কী তা জানার আগে জানতে হবে বাংলাদেশে গাড়ির নম্বর প্লেট কারা এবং কীভাবে ঠিক করেন। গাড়ি কেনার সময় গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। এটি বাংলাদেশ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি বা বিআরটিএ দিয়ে থাকে।
বিআরটিএতে কোন গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন জন্য আবেদন করা হলে, তাদের ফর্মে গাড়ির তথ্যগুলো জমা দিতে হয়। গাড়ির তথ্য দেওয়ার পর গাড়িটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে বিআরটিএ তা নির্ধারণ করে গাড়িটির একটি নম্বর প্রদান করে। নম্বরপ্লেট প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ-এর নিয়ম অনুসারে মোট ১৯টি ক্যাটাগরি রয়েছে। এর মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়ি, বাকি ১৮টি ক্যাটাগরিই জনসাধারণের গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ফরম্যাটের মাঝের অংশে গাড়ির ক্যাটাগরি বুঝাতেই বাংলা বর্ণগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জেনে নিন কোন বর্ণ দিয়ে কোন ক্যাটাগরি বুঝানো হয়ে থাকে?
নিম্নে ১৯টি ক্যাটাগরির নম্বর প্লেটের বর্ণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হলঃ-
- ক বর্ণ - প্রাইভেট কার (৮০০ সিসি)-এর ক্ষেত্রে 'ক' বর্ণটি ব্যবহৃত হয়।
- খ বর্ণ - প্রাইভেট কার (১০০০-১৩০০ সিসি)-এর ক্ষেত্রে 'খ' বর্ণটি ব্যবহৃত হয়।
- গ বর্ণ - প্রাইভেট কার (১৫০০-১৮০০ সিসি)-এর ক্ষেত্রে 'গ' বর্ণটি ব্যবহৃত হয়।
- ঘ বর্ণ - জীপগাড়ির ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য 'ঘ' বর্ণটি ব্যবহৃত হয়।
- চ বর্ণ - মাইক্রোবাসের নম্বর প্লেটে ব্যবহার করা হয় 'চ' বর্ণ।
- ছ বর্ণ - ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও লেগুনার জন্য নম্বর প্লেট-এ 'ছ' বর্ণটি নির্ধারিত হয়ে থাকে।
- জ বর্ণ - মিনিবাসের ক্যাটাগরি নির্ধারণের জন্য নম্বর প্লেট-এ ‘জ’ বর্ণটি ব্যবহার করা হয়।
- ঝ বর্ণ - বড় বাস বা কোস্টার বাসের ক্যাটাগরি বুঝাতে ব্যবহৃত হয় নম্বর প্লেট-এ ‘ঝ’ বর্ণ টি।
- ট বর্ণ - কোনো গাড়ির নম্বর প্লেট-এ যদি ‘ট’ বর্ণ লেখা থাকে তাহলে এটা বড় ট্রাকের জন্য নির্ধারিত।
- ঠ বর্ণ - ডাবল কেবিন পিক-আপ এর জন্য নম্বর প্লেট-এ ‘ঠ’ বর্ণটি ব্যবহৃত হয়।
- ড বর্ণ - মাঝারি ট্রাকের নম্বর প্লেট-এ ব্যবহার করা হয় ‘ড’ বর্ণটি।
- ন বর্ণ - কোনো গাড়ি যদি ছোট পিকআপ ক্যাটাগরির হয় তাহলে নম্বর প্লেট-এ ‘ন’ বর্ণ ব্যবহার করে ক্যাটাগরি চিহ্নিত করা হয়।
- প বর্ণ - ট্যাক্সি ক্যাবের জন্য নির্ধারিত ক্যাটাগরিতে নম্বর প্লেট-এ ‘প’ বর্ণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- ম বর্ণ - পণ্য পরিবহন এবং ডেলিভারির জন্য ব্যবহৃত পিক-আপ বুঝানোর জন্য বাংলা বর্ণমালার ‘ম’ বর্ণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- দ বর্ণ - প্রাইভেট বা নিজস্ব পরিবহনের জন্য যেসব প্রাইভেট সিএনজি চলাচল করে থাকে সেগুলোর নম্বর প্লেট-এ ‘দ’ বর্ণ ব্যবহৃত হয়।
- থ বর্ণ - ভাড়ায় চলিত সিএনজির জন্য ‘থ’ বর্ণটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- হ বর্ণ - ৮০-১২৫ সিসি প্রকৃতির মোটরবাইক হলে বাইকের নম্বর প্লেট ‘হ’ বর্ণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
- ল বর্ণ - ১৩৫-২০০ সিসি’র বাইক হয় তাহলে সেই বাইকের নম্বর প্লেট ‘ল’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
- য বর্ণ - প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গাড়িগুলো চিহ্নিত করতে নম্বর প্লেট ‘য’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে গাড়ির নম্বর প্লেট সম্পর্কে এবং বাংলা বর্ণ দিয়ে গাড়ির প্রকারভেদ সম্পর্ক বিস্তারিত জেনে নিলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url