গাড়ির এসির ঠাণ্ডা বাড়ানোর সহজ টিপস
গ্রীষ্মকালে উষ্ণ আবহাওয়ায় অনেক সময় দেখা যায় আমাদের গাড়ির এসি প্রায়ই সঠিকভাবে কাজ করে না। এতে করে গাড়ির এসি চললেও পর্যাপ্ত ঠান্ডা হয় না। যার কারণে আমরা গাড়ির অভ্যন্তরে থেকেও কোন উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে এসি বন্ধ করতঃ গাড়ির জানালা খুলে দিয়ে থাকি। কিন্তু কিছু সহজ প্রক্রিয়া রয়েছে যা আমরা সঠিকভাবে অনুসরণ করলেই গাড়ির জ্বালানি খরচ বাঁচানোসহ এসির পর্যাপ্ত ঠান্ডা বাতাস অনায়াসেই পেতে পারি। প্রিয় পাঠক, আমরা আপনাকে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কিভাবে সহজ প্রক্রিয়ায় গাড়ির অভ্যন্তরের এসি ঠান্ডা রাখা যায় এবং এসি চালানো সত্ত্বেও গাড়ির জ্বালানি খরচ সহজেই কমিয়ে আনা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রচন্ড তাপদাহে গাড়ির এসি সঠিকভাবে কাজ করে না। ছবি: সংগৃহীত প্রতিকী ছবি
পোস্ট সূচিপত্রঃ গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপদাহে ঘর থেকে বাহির হলে আমাদের যদি নিজস্ব একটি গাড়ি থাকে এবং সেই গাড়ির অভ্যন্তরে যদি শীতাতপের সুব্যবস্থা থাকে তাহলে তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি অনুভূত হয়। অতিমাত্রায় গরমের কারণে সার্বক্ষণিক এসি চালিয়ে রাখলে জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, আবার দেখা যায় এসিও ঠিকমতো গাড়িকে ঠান্ডা করতে পারে না। তাই, কিছু সহজ পদ্ধতি জানা থাকলে গাড়ির জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করার পাশাপাশি এসির উপযোগিতাও বৃদ্ধি করা অনেকটাই সম্ভব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা (ইপিএ)-এর মতে তীব্র গরমের সময় গাড়িতে এসির ব্যবহার প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রেও এটি ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে আনে।
নিম্নে গাড়ির এসির ঠাণ্ডা বাড়ানোর সহজ কিছু টিপস তুলে ধরা হলঃ
গাড়ির এসির কার্যকারিতা
যেকোনো গাড়ির মূল চালিকা শক্তি হলো ইঞ্জিন। ইঞ্জিন যদি শক্তিশালী হয় তাহলে আপনার শখের গাড়িটি থেকে প্রয়োজনীয় চাহিদা যেমন-সঠিকভাবে মাইলেজ প্রাপ্তিতে ও এসির ঠান্ডা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। গাড়ির এসি প্রথমত বাতাস টেনে তা থেকে তাপ ও আর্দ্রতা বের করে ঠান্ডা বাতাস গাড়ির অভ্যন্তরে পৌঁছে দেয়। এই কার্যক্রমটি একটি কমপ্রেসর দ্বারা পরিচালিত হয়। আর এই কম্প্রেসর যন্ত্রটি সাধারণত গাড়ির ইঞ্জিন থেকে কাজ করার শক্তি নেয়। অর্থাৎ, আপনি যখন গাড়ির এসি ব্যবহার করেন, তখন গাড়ির মূল চালিকাশক্তি ইঞ্জিনকেও অত্যধিক পরিমাণে বেশি কাজ করতে হয়। যার দরুন বেড়ে যায় গাড়ির জ্বালানি খরচ।
ছায়াযুক্ত স্থানে পার্কিং
সাধারণত গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে শীতল ও ছায়াযুক্ত স্থান বেছে নেওয়া উচিত। কারণ আপনার গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রা গড়ে প্রায় ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়। বিদায় আপনার গাড়িটি বাহিরে থাকা অবস্থায় নিশ্চয়ই ছায়ার নিচে রাখার চেষ্টা করুন। ছায়া সংবলিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করা হলে বুঝতে পারবেন গাড়িটির ভিতরের অবস্থা আগে থেকেই তুলনামূলকভাবে কম গরম রয়েছে। যার কারণে ভেতরের বাতাস ঠান্ডা করতে এসির সীমিত সময়ের প্রয়োজন হয়। আবার গাড়ির ভেতরে বাতাস বেশী গরম অনুভূত হলে এসি চালুর পূর্বে অবশ্যই গাড়ির জানালা অথবা দরজা খুলে দিয়ে গরম বাতাস বের করে দিলেও দ্রুত ঠাণ্ডা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
যাত্রার পূর্বে এসি না চালানো
আমরা প্রায়শই খেয়াল করি যে, গাড়ি ছাড়ার পূর্বে অনেকেই আছেন এসি চালিয়ে রেখে গাড়ির ভিতরটা ঠান্ডা রাখতে পছন্দ করি। এটি কখনই করবেন না। বাতাস ভালো চলাচল রয়েছে এমন পরিবেশে গাড়ির এসি সবচেয়ে ভালো কাজ করে থাকে। আর তাই গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরেই এসি চালু করা উচিত। এতে করে গাড়ির ভিতরে বাতাস দ্রুত ঠান্ডা হবে এবং সাশ্রয় হবে জ্বালানি খরচ। বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড গাড়ির ক্ষেত্রে চলাচলের আগে থেকে এসি ছেড়ে রাখা হলে ব্যাটারির আয়ুষ্কাল অনেকাংশে কমে যেতে থাকে। তাই আমাদের উচিত এই অভ্যাস পরিত্যাগ করে গাড়ি চার্জরত অবস্থায় এসি চালু করা।
গাড়িতে পুন:সঞ্চালন ব্যবস্থা সচল রাখা
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে প্রায় গাড়িতে এসি রিসারকুলেশন বা পুনঃসঞ্চালন ব্যবস্থা সচল রাখা যায়। পুনঃসঞ্চালনের প্রধান সুবিধা হল এসি শুধুমাত্র গাড়ির ভেতর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে তা ঠান্ডা করে থাকে। অর্থাৎ বাইরে যদিও তীব্র গরম থাকে তবুও এসিটি শুধুমাত্র গাড়ির ভিতরের তুলনামূলক শীতল বাতাসকে ঠান্ডা করে আবার গাড়িতে পৌঁছে দেয়। যার জন্য এসির তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নির্ধারণ করা থাকলে গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা ৭২ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়িতে থাকা এসির কম্প্রেসর বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর এসি গাড়ির ঠান্ডা বাতাসকে পুনঃসঞ্চালন করবে। এতে করে গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর অনেক চাপ কমবে এবং জ্বালানিও সাশ্রয় হবে।
নিয়মিত গাড়ির এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করা
গাড়ির একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হল এয়ার ফিল্টার। এটি সাধারণত এসির বাতাস নির্গমনপথ হতে বেরিয়ে আসা বাতাস থাকা ময়লা এবং ধুলো-বালি সরিয়ে দেওয়ার কাজ করে। তাই এসির ফিল্টার নোংরা হয়ে গেলে তখন এটি বাতাস চলাচলে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। আপনি গাড়ির এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করতে চাইলে প্রয়োজনে তা গাড়ির নির্দেশিকা বইয়ে উল্লেখ করা থাকে। সেটা হতে পারে প্রতি বছর বা দুই বছর বা প্রতি ১৫-২০ হাজার মাইল অন্তর। তাই, উল্লেখিত সময়সূচী অনুযায়ী নিয়মিত গাড়ির এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করলে এসির কার্যকারিতা সঠিক থাকবে।
ক্ষয়জনিত ছিদ্র এড়িয়ে না যাওয়া
সাধারণত গাড়ির এসির কোন যন্ত্রাংশে ক্ষয় বা ছিদ্র থাকলে এসির রেফ্রিজারেন্ট কমে যেতে থাকে। এই রেফ্রিজারেন্ট হল একটি রাসায়নিক যৌগ যা বাতাসকে ঠান্ডা করার ক্ষেত্রে এসিতে ব্যবহৃত হয়। রেফ্রিজারেন্ট কমে গেলে এসি থেকে গরম বাতাস বের হওয়া ছাড়াও দেরিতে বাতাস ঠান্ডা হওয়ার মতো নানান সমস্যা দেখা যায়। তাই অনেকে গাড়ির এসিতে অতিরিক্ত রেফ্রিজারেন্ট সংযোগ করেন যা রিচার্জিং বলে পরিচিত। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, এই রিচার্জিং প্রক্রিয়া গাড়ির উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি। যদি আপনার গাড়িতে রেফ্রিজারেন্ট কমে যাবার উদ্ভূত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ধরে নিতে হবে এসির কোন যন্ত্রাংশে কোথাও ক্ষয়জনিত ছিদ্র বা ত্রুটি রয়েছে। এই ত্রুটি যদি দ্রুত মেরামত করা না হয় তাহলে আসল সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এক্ষেত্রে পেশাদার কোন কারিগরের পরামর্শ নিয়ে এই ত্রুটি যত দ্রুত সম্ভব মেরামত করে সারিয়ে নেওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে প্রচন্ড গরমে শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির এসির ঠান্ডা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে কিছু সহজ টিপস জেনে নিলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url