''কেনাফ'' চাষ কি ? তা জানুন!!!
কেনাফ এক ধরনের আঁশ জাতীয় ফসল যা পরিবেশবান্ধব এবং অনেকটা পাটের মতো দেখতে। সাধারণত উষ্ণ বা উষ্ণ প্রধান দেশ গুলোতে এজাতীয় ফসল ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। তাই উঁচু-নিচু, পাহাড়, চরাঞ্চল বা উপকূলীয় অঞ্চলে করার ক্ষেত্রে উপযোগী জায়গা। আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কেনাফ চাষ ও উপযোগিতা সম্পর্ক বিস্তারিত জানবো।
''কেনাফ'' চাষ কি ? তা জানুন!!!
কেনাফ চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সঠিকভাবে চাষ করলে কেনাফ চাষে প্রচুর ফলন হয়। পাট চাষের চাইতে কেনাফ চাষে পরিচর্যা কম হলেও চলে। এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। ব্র্যান্ডেড কাপড় তৈরিতে, টেক্সটাইল, মেরামত কাজে জন্য বিল্ডিং উপকরণ, তেল শোষক ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্যাদি তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের মধ্যে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য হতে আয় প্রায় আট বিলিয়ন। দেশের জিডিপিতে এইখাত থেকে আয় আসে ১.৪ শতাংশ, আর কৃষিতে তা দিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৬ শতাংশ।
অঞ্চল ভিত্তিক উৎপাদনঃ
আমাদের দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাউর এলাকা, পাহাড়ি এলাকার ঢালু প্রকৃতির জমি, উপকূলীয় ও চর অঞ্চলীয় এলাকায় অনাবাদি জমি এবং আউশ ধান চাষের জন্য উপযুক্ত নয় এমন প্রকৃতির অনুর্বর মাটিতে কেনাফ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবার দেশের যে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষাবাদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা নেই, এমন জায়গায় ধানের চাইতে প্রচণ্ড খরা সহ্য করার মতো কেনাফ চাষ খুবই উপযোগী।
কেনাফ উৎপাদনকারী অঞ্চল গুলোর মধ্যে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর নরসিংদী ইত্যাদি জেলা রয়েছে। জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে কেনাফ চাষে আঁশ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার বেল। কেনাফ কে অনেকে আঞ্চলিক ভাষায় মেস্তা বলে থাকে। দেশের উৎপাদিত ও আমদানিকৃত কেনাফ বীজ সঠিক পদ্ধতিতে বপন ও চাষ করা সম্ভব হলে আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ আশি হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে।
কেনাফের গুরুত্বঃ
মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে পাটের চাইতে কেনাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ফসল চাষে মূল মাটির প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি গভীরে প্রবেশ করে মাটির উপরের স্তরে সৃষ্ট শকসক্ত 'প্লাউপ্যান' ভেঙ্গে দিয়ে এর নিচে তলিয়ে যাওয়া জৈব বিহীন খাদ্য সংগ্রহ পূর্বক মাটির উপরিভাগের মিশিয়ে দেয়। যার কারণে অন্যান্য অগভীরমূলী ফসলের ক্ষেত্রে মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে সহজে হয় যার কারণে মাটির ভৌত অবস্থার উন্নয়ন ঘটে। মাটির গুনাগুন ঠিক থাকে এবং মাটির পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক থাকে।
কেনাফ হতে উৎপাদিত দ্রব্যাদিঃ
অনেক দেশেই কাগজের মন্ড তৈরিতে, শিল্পজাত দ্রব্যাদি যেমন-বোর্ড, জিও টেক্সটাইল চট, প্লেইন পার্টস, মোটর কার পার্টস, কম্পিউটার পার্টস ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার ইন্টেরিয়র ইনসুলেটর ইত্যাদি দ্রব্যাদি তৈরিতে কেনাফের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেনাফের তৈরি করা খড়ি অধিক পরিমাণে পানি শোষণ করতে পারে বলে এটি দিয়ে বেটিং মেটেরিয়াল সহ জ্বালানি ও উন্নত মানের চারকোল তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। কেনাফের বীজ থেকে ঔষধি তেলও পাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কেনাফ চাষ ও এর গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url