আধুনিক দাসত্ব কি - তা জানুন
আমরা জানি অন্ধকার যুগে দাসত্বের প্রথা অর্থাৎ দাস-দাসীর প্রচলন সর্বত্রই ছিল। বর্তমানে সমাজে দাসত্বের প্রথা আর নেই। এটি বিলুপ্ত হয় অনেক আগেই। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি সম্পূর্ণ উল্টো। পৃথিবীর সর্বত্রই এটি বিলুপ্তির ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও এখনো সমাজ ব্যবস্থায় এর বিস্তার চোখে পড়ে। চলুন আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নেই, আধুনিক দাসত্ব কি? কেন এই আধুনিক দাসত্ব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
আধুনিক দাসত্ব - কি
আমরা সাধারণত আধুনিক দাসত্ব বলতে জোরপূর্বক শ্রম, ঋণ, জোরপূর্বক বিবাহ, দাসত্ব এবং মানব পাচারের মতো কয়েকটি প্রথাকে বুঝে থাকি। এটি সমাজ নিমজ্জিত দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকা একপ্রকার যন্ত্রণা। বিশ্বের প্রতিটি স্তরে জীবনের সাথে এটি জড়িয়ে রয়েছে। যার কারণে মানুষ প্রতিনিয়তই প্রতারিত, জোর জবরদস্তি ও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হন। তাই এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দাসত্বের মত শৃংখলে আবদ্ধ হচ্ছেন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আধুনিক দাসত্বের মধ্যে ২ কোটি ৬০ লাখ বাধ্যতামূলক শ্রমে যুক্ত। জোরপূর্বক বিবাহের শিকার ২২ মিলিয়ন যা বিশ্বের প্রতি ১৫০ জনের মধ্যে প্রায় একজন।
অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সংস্থাটির বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক ২০২৩-এ বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আটকা পড়া মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ কোটি। এ হার সবচেয়ে বেশি উত্তর কোরিয়া ও ইরিত্রিয়ায়।সংস্থাটি বলছে, পাঁচ বছর আগের চাইতে এটি এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিড মহামারীর কারণে এর ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ হিসেবে, কোভিড মহামারীতে অনেক শ্রমিকের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি ও ঋণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও যুদ্ধ-সংঘাতে দরুন চাকুরির বাজার, শিক্ষা, হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা এবং জোরপূর্বক ও অনিরাপদে দেশান্তর হওয়ার সংখ্যা চরমভাবে বৃদ্ধি পেরেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী ও শিশুরা। বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার প্রতি পাঁচজনের একজনই শিশু। যার অর্ধেকই বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে যা ২০১৬ সালের তুলনায় আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় এক কোটি বেড়েছে।
আধুনিক দাসত্বের শিকার
বর্তমান বিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ক্রমাগতভাবে দাসত্ব প্রথা বৃদ্ধি পাচ্ছে।বর্তমানে শীর্ষ ১০ টি দেশ এই তালিকা রয়েছে।
- প্রথম অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া (১ হাজার জনে ১০৪.৬ জন দাস)
- দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরিত্রিয়া (প্রতি ১০০ জনে ৯০.৩ জন দাস)
- তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মৌরিতানিয়া (প্রতি ১ হাজার জনে ৩২ জন দাস)
- চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব (প্রতি ১ হাজার জনে ২১.৩ জন দাস)
- পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক (প্রতি ১ হাজার জনে ১৫.৬ জন দাস)
- ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে তাজিকিস্তান (প্রতি ১ হাজার জনে ১৪ জন দাস)
- সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (প্রতি ১ হাজার জনে ১৩.৪ জন দাস)
- অষ্টম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া (প্রতি ১ হাজার জনে ১৩ জন দাস)
- নবম অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান (প্রতি ১ হাজার জনে ১৩ জন দাস)
- দশম অবস্থানে রয়েছে কুয়েত (প্রতি ১ হাজার জনে ১৩ জন দাস)
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আধুনিক সভ্যতার যুগে দাসত্ব প্রথা, আধুনিক দাসত্ব কি? আধুনিক দাসত্বের শিকার বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url