আয়াতুল কুরসির ফজিলত জানুন
মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন। এই পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ মানব জাতির কল্যাণের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অসংখ্য নেয়ামত হিসেবে অবতীর্ণ করেন। পবিত্র আল কোরআন এর ৩০ পারার মধ্যে সূরা বাকারার ফজিলত পূর্ণ আয়াত আয়াতুল কুরসি।এই আয়াতুল কুরসির ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। তাই আমরা আজকের এই কনটেন্টের মাধ্যমে আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত । চলুন জেনে নেই আয়াতুল কুরসি কিভাবে আমাদের ইসলামিক জীবনকে মাধুর্যপূর্ণ করে।
পবিত্র আল কোরআনের ফজিলতপূর্ণ সূরা, সূরা বাকারা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এই সূরাটির ২৫৫ নম্বর ফজিলতপূর্ণ আয়াত ''আয়াতুল কুরসি''। এই আয়াতটিতে আল্লাহ তায়ালার একাত্মতা ও মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য গুণের বর্ণনা রয়েছে, যার কারণে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ এই ফজিলতপূর্ণ আয়াতটিতে অনেক সওয়াব অন্তর্নিহিত রেখেছেন।
সংগৃহীতঃ আয়াতুল কুরসি
অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
ফজিলতপূর্ণ আয়াতুল কুরসিতে রয়েছে মোট ৯টি খন্ড বাক্য। প্রথম বাক্যের সাথে নবম বাক্য, দ্বিতীয় বাক্যের সাথে অষ্টম বাক্য, তৃতীয় বাক্যের সাথে সপ্তম বাক্য এবং চতুর্থ বাক্যের সাথে ষষ্ঠ বাক্যের অলৌকিক মিল পাওয়া যায়! আর বাদ পড়ে শুধু পঞ্চম বাক্য। সেটি মাঝ থেকে সুন্দরভাবে তার অর্থ ও অবস্থানকে অর্থবহ করে।
হজরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে একবার আয়াতুল কুরসি পড়বে, জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা হবে না। একদিন এক সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদা পূর্ণ কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? জবাবে রাসুল (সঃ) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) একদিন দেখতে পান, কোন এক ব্যক্তি সদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সঃ)-এর নিকট নিয়ে যাব। তখন সেই আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী। আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসুল (সাঃ)-এর নিকট আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ)–কে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার সেই অপরাধীকে তুমি কী করেছ? আবু হুরায়রা তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুল (সা.) বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা চোরকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।
এবারও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর শপথ করে যে আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বলেন, ‘আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে।’ পরদিন আবারও আবু হুরায়রা (রা.) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে এল, তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, ‘এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব। চোর যখন দেখল এবার তাকে সত্যিই রাসুল (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) সেটা জানতে চাইলেন, চোর বলে, '' যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দিবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।'' এটা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসুল (সাঃ) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে সেই সাহাবী আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। রাসুল (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জানো সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না! তখন রাসুল (সঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ [সহিহ বুখারি নম্বর ২৩১১]। তাই আমাদের প্রতি ফরজ নামাজ শেষে ও ঘুমানোর আগে বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস করতে হবে যাতে করে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার একটি প্রতিনিধি দলকে এক অভিযানে প্রেরণ করেছিলেন। তারা সংখ্যায় কম ছিল। তাদেরকে তিনি কোরআন পাঠ করতে বললেন। প্রত্যেকেই যে যা জানত তা পাঠ করে শোনাল। শেষে তিনি এদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী এক ব্যক্তির কাছে এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তোমার কি আছে? সে বলল, আমার সুরা বাকারা জানা আছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেন, তোমার সুরা বাকারা মুখস্থ? লোকটি বলল, জি হ্যাঁ। রাসূল (সঃ) বললেন, যাও, তুমিই এ দলের আমীর।
আয়াতুল কুরসি পবিত্র আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ বা সবচাইতে মর্যাদা পূর্ণ আয়াত। আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করলে কুফুরী, তাবীজ-কবজ, যাদু টোনা, চোখের নজর, জিনের আসর ছাড়াও বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
নিখিল জাহানের মালিক আল্লাহ তাআ’লা কুরসীর বর্ণনায় বলেন যে, আল্লাহর কুরসী আকাশ এবং যমীন পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। তার প্রশস্ততা, আকৃতির বড়ত্ব এবং ক্ষেত্রের বিশালতার কারণে। ভূমণ্ডল এবং নভোমন্ডলের তুলনা কুরসীর সাথে খুবই ক্ষীণ তুলনা। যেমন কুরসীর তুলনা আরশের সাথে দুর্বল তুলনা।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুনিয়ার আকাশ এবং এর পরবর্তী আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। আর এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। এমনিভাবে সপ্তম আকাশের মধ্যে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের পথ। একইভাবে কুরসী এবং পানির মাঝখানে দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ বছরের। আরশ হচ্ছে পানির উপরে। আর আল্লাহ তাআ’লা আরশের উপরে রয়েছেন। কিন্তু তিনি এতো দূরে থাকলেও তোমাদের আমলের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই।
প্রিয় পাঠক, আমরা আজকের এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে জানতে পারলাম, আয়াতুল কুরসি আমাদের প্রাত্যহিক ইসলামিক জীবন ধারণের জন্য ফজিলতপূর্ণ একটি শ্রেষ্ঠ আমল। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই বিভিন্ন প্রকার বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পেতে আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস করা। আজকের এই কনটেন্টের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।
comment url