OrdinaryITPostAd

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ও এর ব্যবহার

প্রিয় পাঠক,আমরা আজকের এই কনটেন্টটির মাধ্যমে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কে অনেকাংশে পরিচয় করিয়ে দিবো। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই বর্তমান প্রযুক্তির যুগে থ্রিডি প্রিন্টিং-কি, কি কাজে তা ব্যবহৃত হয় এবং কেন তা প্রয়োজন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ 

থ্রিডি প্রিন্টিং- কি ?

থ্রিডি প্রিন্টিং (ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ) বা যুত উৎপাদন এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে যে কোন আকৃতির ত্রিমাত্রিক কঠিন বস্তু তৈরী করা যায় খুব সহজেই। যুত প্রক্রিয়ায় ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা হয় যাতে করে ধাতু বা অন্যবস্তুর স্তর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আকৃতিতে একটির ওপর আরেকটি যুক্ত হতে থাকে। যান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থ্রিডি প্রিন্টিং স্বতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

কি কাজে তা ব্যবহৃত হয় 

যথাযত পদ্ধতিতে কোন কিছু তৈরি করতে হলে কোন ধাতু বা বস্তুকে কেটে বা ছিদ্র করে কাঙ্ক্ষিত আকার প্রদান করা হয়।এই প্রিন্টারটি সাধারণত ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার তথা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের কাজ করে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে এই মেশিনের বিক্রি ব্যাপকভাবে নজর কেরেছে এবং এগুলোর দামও অনেকটা কমেছে। প্রটোটাইপিং এবং ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিং উৎপাদনে এই প্রযুক্তি অনেকটা সক্ষম।পোশাক তৈরিতে, গয়না প্রস্তুত, পাদুকা ডিজাইন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন, স্থাপত্য, প্রকৌশল ও নির্মাণ, অটোমোটিভ, মহাকাশ, দন্ত এবং চিকিৎসা শিল্প, শিক্ষা, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা, পুরকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

কেন তা প্রয়োজন 

তথাকথিত তরল ফটোপলিমার (এক ধরনের কালি) এর সাহায্যে প্রিন্ট করা হয় যা সাধারণ জেট ইনং জেট প্রিন্টার যেভাবে স্প্রে করে সেইভাবেই স্প্রে করা হয়। অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে কালি শক্ত করা হয়। এরপর এক এক স্তর সৃষ্টির মাধ্যমে নকল বস্তুটি তৈরি হয়৷ অনেকে ধারনা করে থাকেন থ্রিডি মুদ্রণ কেবলমাত্র পলিমার প্রযুক্তির জন্যই ব্যবহৃত হয়। বাস্তবে এতে পলিমার ছাড়াও বিভিন্ন ধাতব পদার্থ যেমন-ইস্পাত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস

চার্লস ডব্লিউ. হাল ১৯৮৪ সালে প্রথম কর্ম উপযোগী ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। তিনিই আধুনিক থ্রিডি প্রিন্টারের জনক এবং এর কার্যক্ষম প্রমিত প্রযুক্তির উদ্ভাবক। প্রথম প্রকাশিত তথ্যসূত্র অনুযায়ী একটি কঠিন আকৃতি মুদ্রণের প্রথম কাজটি করা হয়েছিল ১৯৮১ সালে।এটি করেছিলেন তার নাম হচ্ছে নাগোয়া মিউনিসিপাল ইন্ডস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর হিদেও কোদামা।তারপর থেকে এই প্রযুক্তি দিন দিন উন্নতি সাধন করেছে।
কার্যপ্রনালিঃ-

প্রথমে কম্পিউটার-সহায়ক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বস্তুর একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করা হয়। এরপর প্রিন্টারে সেটির একটি ফাইল (সিএডি) প্রেরণ করা হয়। প্লাস্টিক ফিলামেন্টে মোটরের মাধ্যমে প্লাস্টিক গলিয়ে একটি সরু মুখ (নজল) দিয়ে বের করা হয়। প্রিন্টারটি তরল, গুঁড়া, কাগজ বা ধাতব বস্তুর স্তর তৈরি করে এবং পর্যায়ক্রমে একের পর এক স্তর তৈরির মধ্য দিয়ে বস্তুটি অনুরুপ গঠন করা হয়।
ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং বা এডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে এডিটিভ অর্থাৎ প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস দিয়ে কোনো বস্তুর থ্রিডি মডেল তৈরি করা। মডেলিং সফটওয়ার ব্যবহার করে যে কোনো জিনিস থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। খেলনা, যন্ত্রপাতি, গয়না এমন কি অস্ত্র পর্যন্ত বানানো যায় এভাবে। অনেকেই এই প্রযুক্তিকে যুগান্তকারী বলেছেন, কারণ বর্তমানে এমন সব নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করা হুচ্ছে যেগুলি তৈরিতে খরচ কম ও কার্যকারিতা আগের প্রোডাক্টগুলোর চাইতে অনেক ভালো। তাই থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে তৈরি প্রোডাক্টের কাছে পুরনো প্রযুক্তির অনেক প্রোডাক্টই অচল হয়ে যাচ্ছে।
থ্রিডি আইটেমের প্রিন্টিং এর জন্য প্রথমে যে আইটেমের ডিজাইন করতে হবে সেটার ডিজিটাল ডিজাইন প্রস্তত করতে হয়। যার জন্য থ্রিডি মডেলিং প্রোগ্রাম (CAD) ব্যবহার করা হয় বা থ্রিডি স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করা হয়। স্ক্যানার প্রথমে জিনিসটার একটি কপি বানায় তারপর সেটাকে থ্রিডি মডেলিং প্রোগ্রামে পাঠিয়ে দেয়। তারপর ডিজাইন ডিজিটাল ফাইলে কনভার্ট করা হয়। তখন মডেলটি কয়েক’শ এমনকি হাজার লেয়ারে ভাগ হয়ে যায়। প্রিন্টার এই প্রত্যেকটি লেয়ারের ডিজাইন পড়তে পারে এবং প্রিন্ট দিতে পারে। তারপর প্রিন্টার নির্ভুলভাবে প্রত্যেকটি লেয়ার প্রিন্ট দিয়ে একসাথে জোড়া লাগিয়ে দেয়। ফলে একেবারে মডেলের মত থ্রিডি আইটেম প্রিন্টার থেকে বের হয়।
থ্রিডি কনটেন্ট বানানো বেশ কঠিন প্রসেস। প্রিন্টিং ডকুমেন্ট বানানো সহজ কাজ, যে কেউ তা করতে পারে। কিন্ত থ্রিডি ডিজাইন করতে ডিজাইন সফটওয়ার ব্যবহার করার দক্ষতা প্রয়োজন হয়য়। সাথে স্ক্যানিং বা ডিজিটাইজিং হার্ডওয়ারের ব্যবহার জানতে হয়। এগুলোর জন্য প্রশিক্ষণ আর বিনিয়োগ দরকার, যা সাধারণত যে কেউ চাইলেই করতে পারবে না।

সব ধরনের থ্রিডি একইভাবে বানানো হয় না। একটা থ্রিডি ছবি তৈরি করতে পারলেই সেটা থ্রিডি প্রিন্ট করা যাবে বিষয়টা তেমন নয়। থ্রিডি প্রিন্ট দেয়ার জন্য দরকার হয় থ্রিডি ডেটা। যেখানে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে প্রোডাক্টের ডিটেইলড জ্যামিতিক মাপ দেওয়া হয়ে থাকে। তার মানে একটা সফটওয়ার প্রয়োজন যেটা থ্রিডি ডেটার ইনপুট নিয়ে সেটাকে থ্রিডি প্রিন্ট করার উপযোগী হিসেবে কনভার্ট করে। এগুলির জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয় ও সময়ও দিতে হয়।

কারখানায় থ্রিডি প্রিন্টিং

থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার শুরু হয় শিল্প কারখানায় এবং এখনোও সেটাই হয়ে আসছে। ফ্যাক্টরিতে থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে ডিজাইনের প্রটোটাইপ তৈরি করা হয়। এর নাম হচ্ছে র‍্যাপিড প্রটোটাইপ। আবার কোনো জিনিস একবার বানানোর জন্য বা কম পরিমাণে প্রোডাকশনের জন্যও থ্রিডি প্রিন্টিং করা হচ্ছে।২০১০ সালে ডাচ ডিজাইনার আইরিস ফন হার্পেন ক্রিস্টালাইজেশন কালেকশন আনেন তখন জামা-কাপড়ের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম থ্রিডি প্রিন্টিং আসে। এরপর থেকে প্রতিবছরই এটি আরো জনপ্রিয় হচ্ছে। নাইকি, এডিডাসের মতো ব্র্যান্ড অবিশ্বাস্য দ্রুততম সময়ে থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে নতুন জুতার প্রটোটাইপ ডিজাইন করছে।আগে যে প্রোটোটাইপ বানাতে ৬ সপ্তাহ সময় লাগতো, এখন তা দুই দিনেই বানানো সম্ভব হচ্ছে।

প্রিয় ভিওয়ারস, আমরা আজকের এই কনটেন্টটির মাধ্যমে জানতে পারলাম বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দিক থেকে থ্রিডি প্রিন্টার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। প্রযুক্তির বিকাশে থ্রিডি প্রিন্টার এর জনপ্রিয়তা ও নির্ভরতা সম্পর্কে আমরা অনেকাংশে জানতে পারলাম। এই কন্টেন্টটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪