OrdinaryITPostAd

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সুষম খাদ্য গ্রহণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সুষম খাদ্য গ্রহণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন আজকের এই কনটেন্টটির মাধ্যমে। কোষ্ঠকাঠিন্য এর লক্ষ্যণ, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেকাংশে জেনে নিতে পারবেন খুব সহজেই। আসুন বিস্তারিত জেনে নেই, মানুষের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্যের কুফল ও প্রতিকার সম্পর্কে।
সংগৃহীতঃ প্রতীকী ছবি

পোস্ট সূচিপত্রঃ পায়খানা কষা বা শক্ত হওয়াকেই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এটি খুব পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেরই মাঝে মাঝে পায়খানা খুব শক্ত হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ কসরত করতে হয়। এ ছাড়া পায়খানার পর মনে হয় পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয়নি।

লক্ষণসমূহ

গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যদি কোন সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করেন তাহলে ধরেই নিতে হবে তিনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতেছেন। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে যেসব লক্ষণ থাকতে পারে সেগুলো হলো-
  • পায়খানা শুকনো, শক্ত চাকার মত হওয়া
  • পায়খানার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হওয়া
  • পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া
  • পেট পরিষ্কার হচ্ছে না এমন মনে হওয়া

কারণ

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা শক্ত হয়, যার কারণে অনেকে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে একটানা তিন–চারদিন পায়খানা নাও হতে পারে। সাধারণত সপ্তাহে যদি তিন বারের কম পায়খানা হয়, তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ তৈরি হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর প্রচন্ড গ্যাস অনুভূত হতে থাকে। মুখে রুচি থাকে না। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পেট, কোমর ও মলদ্বারে ব্যথা হয়। কেউ যদি দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগেন তবে কোলন ক্যানসারও হতে পারে। থাইরয়েড, কোলেস্টরেল ও ডায়াবেটিস সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি সমস্যা করে থাকে। নিম্নোক্ত কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে:-

ক) ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া

ফাইবার বা আঁশ হলো এক ধরনের শর্করা। পেট পরিষ্কার করার জন্য ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের যে জায়গায় পায়খানা তৈরি হয় ও জমা থাকে, সেখানে ফাইবার অনেকটা স্পঞ্জের মত কাজ করে। পানি শোষণ ও ধারণ করার মাধ্যমে ফাইবার পায়খানায় পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। যারফলে পায়খানা নরম ও ভারী হয়, সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে পায়খানা শক্ত হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

খ) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা

পানি খাবারের ফাইবারের সাথে মিলে পায়খানাকে ভারী ও নরম করে। এর ফলে পরিপাটিন্ত্রের ভেতর দিয়ে পায়খানা চলাচল সহজ হয়। তাই, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

গ) শুয়ে-বসে থাকা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ পেটের ভেতরে থাকা নাড়িভুঁড়ি সচল হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে পায়খানা বেরিয়ে আসে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব হলে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

ঘ) পায়খানার বেগ আসলে চেপে রাখা

পায়খানা শক্ত হলে অনেকে টয়লেটে যেতে চায় না, কারণ তখন মলত্যাগ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু পায়খানার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

ঙ) মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা

অনেক সময় মানসিক চাপ, কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা বা বিষণ্ণতায় ভোগার ফলে শরীরের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির ছন্দপতন হয়, শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

চ) ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
  • ট্রামাডল বা ওপিয়েট জাতীয় ব্যথার ঔষধ
  • আইবুপ্রোফেন
  • আয়রন ট্যাবলেট
  • ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
  • কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কিছু ঔষধ
তাছাড়া একসাথে পাঁচটার বেশি ঔষধ খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

প্রতিকার

পায়খানা কষা কেন হয় তা জেনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে কোনো প্রকার ঔষধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। সাধারণ ক্ষেত্রে দিনে অন্তত ৩/৪ লিটার পানি পান করার পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিম্নোক্ত আরও কিছু প্রতিকার ও উপায় গ্রহণ করা যেতে পারে:-
  • ইসবগুলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। পরিমাণমতো ইসবগুল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাতের বেলা খেয়ে নিন। সকালে পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  • তিসির বীজ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তিসিতে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, এগুলো বেশি পরিমানে খাবেন না, বেশি খেলে হজম করা কঠিন হয়।
  • প্রাকৃতিকভাবে দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়। যা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া। এটি পাকস্থলীর কার্যকারিতা উন্নত করে হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। যেকোনো প্রদাহ কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই সাহায্য করে থাকে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়েটে ফাইবারের অভাব দেখা দেয়। তারা সাধারণত কার্বহাইড্রেট, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। যার দরুন পেট পরিষ্কার হতে চায় না। বিশেষ করে এই গরমের দিনে মৌসুমি শাক, সবজি খাওয়া খুবই ভালো। এর মাধ্যমে পেট সহজে পরিষ্কার হয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ফল চিবিয়ে খেলে ভালো। বিশেষ করে এই গরমে রস করে ফল খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। যার দরুন শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়া শরীরে যুক্ত হয় ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ।
  • ডাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহযোগিতা করে। বেশিরভাগ মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা এবং মটর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে।
  • আপনার তন্ত্র উন্নত করার আরেকটি উপকরণ হল জল। স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্রের জন্য আপনার শরীরে হাইড্রেটেড থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সারাদিন প্রচুর পানি পান করুন। শরীরে তারল্যের অভাব প্রায়ই সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রথম কারণ।
প্রিয় ভিওয়ারস, আমরা আজকের এই কনটেন্টটির মাধ্যমে জানতে পারলাম কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদের দৈহিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করে এবং এ থেকে প্রতিকারের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে অনেকাংশে অবগত হলাম। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলোকবর্ষ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুণ। প্রীতিটি কমেন্ট রিভিও করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪